অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। ওয়াশিংটনে সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে (বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাতে) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিনকেনের সঙ্গে বৈঠকের পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের একথা জানান।
আলোচনায় কোন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশি গুরুত্ব দিয়েছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ে (যুক্তরাষ্ট্র) গুরুত্ব দিয়েছে।’
একই প্রশ্নের ধারাবাহিকতায় তিনি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়েও আলাপ হয়েছে। তারা চান এখানে একটি আদর্শ নির্বাচন হবে। আমি বলেছি— অবশ্যই, আমরাও আদর্শ নির্বাচন চাই। আমাদের রক্তে গণতন্ত্র, আমাদের রক্তে জাস্টিস। আমরা গণতন্ত্র, জাস্টিস ও সম্মান সমুন্নত রাখার জন্য ৩০ লাখ প্রাণ দিয়েছি। তবে এ বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনারাও আমাদের সহায়তা করুন; যাতে করে আমরা অবাধ, সুষ্ঠ ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে পারি।’
উল্লেখ্য, চলতি বছরের শেষে অথবা সামনের বছরের শুরুতে প্রথমে বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকার সব পক্ষকে নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ দেখালেও এখন পর্যন্ত অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে আসতে সম্মত হয়নি।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র চায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরা বলেছি— অবশ্যই, আমরাও এটি চাই। আমরা অবাধ, সুষ্ঠ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি করার জন্য আমরা ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র করেছি; যাতে করে কোনও জাল ভোট না হয়। আমরা স্বচ্ছ ব্যালট বক্স করেছি, আমরা একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করেছি। তাদের বাজেটও স্বাধীন এবং নির্বাচনের সময়ে তাদের হাতে সব ক্ষমতা থাকে। তারা (ইসি) যেকোনও লোককে বদলি করতে পারে, যেকোনও লোককে সাসপেন্ড করতে পারে এবং এরমধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকও আছে।’
গত ১৪ বছরে দেশে অসংখ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানিয়েছেন, এরমধ্যে গুটি কয়েক নির্বাচনে সমস্যা হয়েছে এবং সেখানে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। কিন্তু নির্বাচন একা একা হয় না। আমরা আপনাদের পর্যবেক্ষক চাই এবং আমরা তাদের স্বাগত জানাবো।’
যুক্তরাষ্ট্রকে বেশি সংখ্যক পর্যবেক্ষক পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তবে পর্যবেক্ষক যেন বাংলাদেশি-বংশোদ্ভূত লোক না হয়।’
‘সরকার একা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না’ মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এরজন্য সকল বিরোধী দলকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরও প্রতিশ্রুতি দিতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে। তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না।’
দেশের নির্বাচনে সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে নির্বাচনে লোক মারা যায়। কিন্তু আমরা চাই না আমাদের একটি লোকও মারা যাক। আমরা খুব ইগোইস্টিক। আমরা এত উদ্বেলিত হয়ে যাই যে, আমরা লোক মেরে ফেলি। আমরা চাইছি যে, একটি লোকও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যেন মারা না যায়।’