দ্বিতীয় বিবাহকে কেন্দ্র করে প্রথম স্ত্রী নাদিয়া আক্তার(৪০)’র সাথে গত একমাস ধরে দাম্পত্য কলহ চলে আসছিল হিলাল পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি মাওলানা রুহুল আমিন(৪৫)’র। এরই জের ধরে গত শুক্রবার দিবাগত রাত অনুমান ১টার দিকে স্ত্রীর হাতেই নির্মমভাবে খুন হতে হয়েছে তাঁকে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলার ৩নং ফুলবাড়ী ইউনিয়নের হিলালপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের ভাড়াটে বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর থেকে ওই এলাকায় লজিং মাস্টার থেকে লেখাপড়া করে পরে স্থানীয় জামে মসজিদে ইমামতি ও ফয়যে জলিল আতহারিয়া মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
নিহত মাওলানা রুহুল আমিন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ৯নং ডৌবাড়ী ইউনিয়নের লামাদুমখা (ডেমী) গ্রামের শহিদুর রহমানের ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ দাম্পত্যের পরও প্রথম স্ত্রী নাদিয়া আক্তারের ঘরে কোনো সন্তান না আসায় তার লিখিত অনুমতি নিয়েই দ্বিতীয় বিবাহ করেন রুহুল আমিন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম স্ত্রীর উপস্থিতিতে পারিবারিকভাবে তিনি বিবাহকার্য সম্পন্ন করেন। এরপর দ্বিতীয় স্ত্রীকে গ্রামের বাড়িতে রেখে প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে মসজিদের পাশেই একটি বাসায় ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করছেন। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে বাড়ি যাওয়া নিয়ে গত একমাস থেকে প্রথম স্ত্রী নাদিয়ার সাথে দাম্পত্য কলহ চলছে। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মহল্লার একটি পারিবারিক দোয়া অনুষ্ঠানে শেষ করে ঘরে আসলে রুহুল আমিনকে আর বের হতে দেখেননি কেউ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মসজিদে ফজরের আজান শোনা যায়নি। বেলা বাড়লেও রুহুল আমিন মসজিদে যাননি। শনিবার যোহরের নামাজেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। এরপর ধীরে ধীরে তার খোঁজ করতে থাকেন মহল্লাবাসী ও মাদরাসার শিক্ষকগণ। একপর্যায়ে বাসার মালিক এসে রুমে ঢুকে খাটের নিচে তার মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে তার মরদেহ উদ্ধার করে। রুহুল আমিনের দেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন না থাকলেও মাথার পেছন দিকে সামান্য একটি দাগ রয়েছে। সুরতহাল রিপোর্টের পর ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে এবং ঘটনাস্থল থেকে ঘাতক স্ত্রী নাদিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে, রাতের কোনো একসময় স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করার বিষয়টি নিজ মুখেই স্বীকার করেছে ঘাতক নাদিয়া। এরপর নিজেই নিথর দেহটি টেনে খাট থেকে নামিয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে রেখেছে বলেও স্বীকার করেছে। এরআগে তিনি স্বামীকে হত্যা করে রুহুল আমিনের বাবার বাড়িতে গিয়ে তাদের আত্মীয়স্বজনকে জানান, তার স্বামীকে খুঁজে পাচ্ছেন না।
তবে, হত্যার পেছনে দাম্পত্য বিবাদ ছাড়াও অন্য কোনো কারণ থাকতে বলে মন্তব্য করছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, গত প্রায় ১৫ দিন আগে রুহুল আমিনের মোটরসাইকেলটি চুরি হয়েছে। এই চুরিকাণ্ডের সাথেও নাদিয়ার জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আব্দুল নাসের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দাম্পত্য কলহ থেকেই মাওলান রুহুল আমিনকে হত্যা করা হয়েছে। ঘাতক স্ত্রীও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে নিহতের পরিবার।