বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএ) গত ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত কথিত এজিএম ও নির্বাচনকে অবৈধ এবং সংবিধান বহিভূর্ত উল্লেখ করে অবিলম্বে গ্রহণযোগ্য উপায়ে বিসিএ’র এজিএম ও নির্বাচন দাবি করেছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ভিশন প্যানেল।
গত ১৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বিসিএ’র বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলা হয়, ‘অবিলম্বে স্বেচ্ছাচারিতা পরিহার করে আপনারা বৈধ এবং সাংবিধানিক পথে ফিরে আসুন। অন্যায়ের পথ পরিহার করুন। দ্রুত মেম্বারশীফ সমস্যার সমাধান করে সঠিক পন্থায় বিসিএ’র নির্বাচনের আয়োজন করুন। সাধারণ সদস্যদের নেতৃত্ব বাছাই করার সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে তাদের ভোটের অধিকার সুরক্ষা করুন।’
প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবেন জানিয়ে তারা বলেন, ‘আপনাদের ভুল সংশোধনে আমরা সুযোগ দিতে রাজি। সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে বিসিএ’র নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতার পথ পরিহার না করলে আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠনের কল্যাণ এবং সাধারণ সদস্যদের অধিকার সুরক্ষায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো। আশা করছি আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আতাউর রহমান লায়েক, সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সাইদুর রহমান বিপুল, হেলাল মালিক, সাইফুল আলম, হুমায়ন রশিদ, সিদ্দিকুর রহমান জয়নাল, ফজলুল হক, আনোয়ার হোসেন, দেলোয়ার হোসেন ও টিপু মিয়া।
সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক, অবৈধ এবং বিসিএ’র সংবিধান লঙ্ঘন করে জোরপূর্বক অন্যায়ভাবে এজিএম ও নির্বাচনের নামে একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, সংগঠনের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিমের নেতৃত্বে তাঁর পছন্দের লোকদের দায়িত্ব দেয়ার জন্য এমন অন্যায় করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিসিএ’র বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিমের নানা অন্যায়, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার নানা ঘটনা তুলে ধরেন তারা।
বিসিএ’র সংবিধানের ধারা ২৮ ও ২৯ মতে, এজিএম-এ কোরাম পূর্ণ হতে ২৫ শতাংশ সদস্যের উপস্থিতি প্রয়োজন। সভা শুরুর আধা ঘন্টার মধ্যে কোরাম পূর্ণ না হলে এজিএম স্থগিত করে নতুন করে এজিএম-এর তারিখ ঘোষণা করতে হয়। বিসিএ’র বর্তমান মোট সদস্য সংখ্যা বিবেচনায় কোরাম পূর্ণ হতে কমপক্ষে ৩৮০ জন সদস্যের উপস্থিতি প্রয়োজন। কিন্তু ওই এজিএম-এ অতিথিসহ মোট উপস্থিতি ২শ জনের কম ছিলো।
সাধারণত এজিএম-এ সংগঠনের সদস্য ছাড়া অন্য কারো উপস্থিত থাকার নিয়ম নেই। কিন্তু সেখানে সংগঠনের সদস্য নন এমন অনেকেই উপস্থিত। এমনকি এজিএম-এর মঞ্চেও ছিলেন অতিথি কথিত নির্বাচনের কমিশনার।
এছাড়া, যেকোনো সংগঠনে এজিএম-এর মূল এজেন্ডা থাকে সংগঠনের আর্থিক প্রতিবেদন সদস্যদের কাছে তুলে ধরা এবং এর অনুমোদন। আর বিসিএর সংবিধানের ধারা ৭০ অনুযায়ী এজিএম-এর ২১ দিন আগে মেম্বারদের কাছে বাৎসরিক আর্থিক রিপোর্ট পাঠাতে হয়। রিপোর্ট পাঠানো তো দূরের কথা, কথিত ওই এজিএম-এ উপযুক্ত কোনো আর্থিক প্রতিবেদন-ই তুলে ধরা হয়নি। ফলে ওই এজিএম সাংবিধানিকভাবে অবৈধ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে ‘ভিশন প্যানেল’- এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই প্যানেলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সাইদুর রহমান বিপুল, সেক্রেটারি জেনারেল প্রার্থী হেলাল মালিক এবং চীফ ট্রেজারার প্রার্থী সাইফুল আলম। এতে আরও বলা হয়, ‘দেশব্যাপী আমরা ক্যাম্পেইন করে বিসিএ’র আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্যাটারার্সদের উজ্জীবিত করেছিলাম এবং অনেক মেম্বার সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো- বিসিএ’র বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জনাব এম এ মুনিম ওবিই একের পর এক অন্যায়, স্বেচ্ছাচারিতা এবং পক্ষপাতিত্বের মাধ্যমে আমাদেরকে নির্বাচন করার সুযোগ দেন নাই। নিজের পছন্দের লোকদের দিয়ে তিনি কমিটি ঘোষণা করেছেন বলে আমরা শুনেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিম ‘ভিশন প্যানেল’ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। মেম্বারশীফ অনুমোদনের সময় তিনি প্রকাশ্যে পক্ষপাতিত্ব করেন। তাঁর এমন পক্ষপাতমূলক আচরণের বিষয়ে বিসিএ’র সাবেক দুজন প্রেসিডেন্ট বুজলুর রশিদ এমবিই এবং পাশা খন্দাকার এমবিই’র কাছে বিচারও দিয়েছিলেন ‘ভিশন প্যানেল’ এর নেতৃবৃন্দ। কিন্তু বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এম এ মুনিমের পক্ষপাত থামেনি। তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন।
সম্পূর্ণ অন্যায় ও অসাংবিধানিকভাবে চীফ ট্রেজারার সাইদুর রহমান বিপুলের ক্ষমতা কেড়ে নেন প্রেসিডেন্ট। চীফ ট্রেজারার হিসেবে মেম্বারশীফ আবেদনের সকল আর্থিক হিসাব সাইদুর রহমান বিপুলের বুঝে নেয়ার কথা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট দাবি করেন- সাইদুর রহমান বিপুল যেহেতু প্রার্থী হবেন, তাই তাঁকে মেম্বারশীফের হিসাব দেয়া যাবে না। অথচ সেক্রেটারি জেনারেল মিঠু চৌধুরী আবারও একই পদে প্রার্থী হওয়া সত্বেও তাঁর দায়িত্ব চালিয়ে যান। প্রেসিডেন্ট তাঁকে বাধা দেননি। এনইসি মিটিং কিংবা আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ছাড়াই কেবল মুখের কথায় চীপ ট্রেজারারের ক্ষমতা কেড়ে নেয়ায় এই ঘটনা বিসিএ’র সংবিধান বহির্ভূত এবং এটি একজন বিদায়ী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার নির্লজ্জ উদাহরণ।
মেম্বারশীপ আবেদনের চেক ডিসঅনার হয়েছে। কিছু চেক ডেডলাইনের পরে ক্লিয়ারিং ডেইট দেয়া ছিলো কিন্তু প্রেসিডেন্ট দীর্ঘ ৭ মাসেও এসব নিয়ে কিছু বলেননি। অথচ সিদ্ধান্ত ছিলো একটি চেক ডিসঅনার হলে অথবা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্লিয়ার না হলে সংশ্লিষ্ট বান্ডিলের সব আবেদন বাতিল হয়ে যাবে, যেহেতু বাল্ক হিসেবে আবেদনগুলো জমা হয়েছিলো।
এছাড়া মেম্বারশীফ তালিকা উপস্থাপন না করেই প্রেসিডেন্ট এনইসিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এর অনুমোদন করেয় নিয়েছেন। তিনি ভিশন প্যানেলকে মেম্বারশীফ তালিকা দেননি। যেকারণে মেম্বারশীফ তালিকায় কোনো অনিয়ম করা হয়েছে বলে সন্দেহ এবং আশঙ্কা তৈরি হয়।
মেম্বারশীফ তালিকার জন্য ইলেকশন কমিশন এবং প্রেসিডেন্টের কাছে বার বার অনুরোধ স্বত্বেও তার আমাদের জবাবও দেননি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিন ছিলো ৫ অক্টোবর ২০২৩। তার আগেরদিন ৪ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টায় এক ইমেইলে ইলেকশন কমিশন জানায়- তারা ‘ইনিশিয়াল’ একটি তালিকা পেয়েছে এবং বিসিএ-কে সেটি পুনরায় চেক করতে বলেছে। চূড়ান্ত তালিকা পাবে ৫ অক্টোবর ২০২৩। অথচ এর প্রায় এক মাস আগেই মেম্বারদের কাছে ইলেকশন প্যাক পাঠিয়েছে বিসিএ। মেম্বারশীফ তালিকা চূড়ান্ত না হলে ২২ আগস্টের এনইসি মিটিংয়ে প্রেসিডেন্ট কোন তালিকার অনুমোদন চাইছিলেন? কোন তালিকা ধরে তিনি মেম্বারদের কাছে ইলেকশন প্যাক পাঠালেন?’
মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় শেষ হয়ে গেলেও ভিশন প্যানেলকে মেম্বারশীফ তালিকা দেয়া হয়নি। ফলে তাদের ক্যাম্পেইনেরও সুযোগ দেয়া হয়নি। সুরাহা করা হয়নি মেম্বারশীফ নিয়ে আপত্তির। যে কারণে ভিশন প্যানেল মনোনয়ন জমাদান থেকে বিরত থাকে এবং লিখিতভাবে ইলেকশন কমিশন ও বিসিএ নেতৃবৃন্দকে মেম্বারশীফ নিয়ে আপত্তির সূরাহার পর নির্বাচনের আয়োজন করতে। প্রসঙ্গত, ভিশন প্যানেলকে মেম্বারশীফ তালিকা দেয়া হয়েছে ৯ অক্টোবর। যা কথিত নির্বাচনের মাত্র ৫ দিন আগে। তারা বলেন, ‘আমরা তখন এই মেম্বারশীফ তালিকা দিয়ে কি করবো?’
প্রত্যোকটি অন্যায়ের ঘটনায় বিদায়ী প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ করেছেন জানিয়ে তারা বলেন, প্রেসিডেন্ট কখনো কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। কিন্তু গায়ের জোরে অন্যায় চালিয়ে গেছেন। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবরের কথিত এজিএমও উপস্থিত হয়ে প্রেসিডেন্টর অন্যায়ের কথাগুলো একে একে তুলে ধরেছেন। সাংবিধানিকভাবে ওই এজিএম এবং নির্বাচন যে অবৈধ সেকথা জানিয়ে এজিএম থেকে বেরিয়ে আসেন ভিশন প্যানেলের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাদেক আহমেদ সবুজ, শিপা করিম, জুবায়ের লস্কর, নুরুল ইসলাম মাহবুব, নুরুল ইসলাম জিতু, শেখ নুরুল ইসলাম, মইনুদ্দিন আহমদ, হারুন রশিদ, আব্দুল আহাদ, তরিশ মিয়া, ইশতিয়াক হোসেন দুদু, শামীম বশর, সানু মিয়া, ফরহাদ আহমেদ, বাবর করিম চৌধুরী, আব্দুল রব, কামাল আহমদ, জিয়াউর রহমান, মান্না চৌধুরী, টিপু চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম, শাহ নুরুল ইসলাম, কাজী জহির ইসলাম, কাউন্সিলার মোহাম্মদ খালেদ মিল্লাত, মিজানুর রহমান রকেট ও সবুজ পাটওয়ারী প্রমুখ।