বাঁ থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুক
সরকার পতনের এক দাবিতে চলমান যুগপৎ কর্মসূচির মধ্যেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরামের অন্তত পাঁচ জন সিনিয়র নেতা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। পাশাপাশি কয়েকজন নেতা দেশে থাকলেও বর্তমানে তারা অসুস্থ।
গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির দায়িত্বশীল ও সিনিয়র একাধিক নেতা জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই দেশের বাইরে রয়েছেন বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা। তবে কোনও কোনও নেতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে থাকলেও পরিস্থিতির ইতিবাচক কোনও অগ্রগতি হয়নি।
দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনের মাঝপর্যায়ে চিকিৎসা গ্রহণের জন্যই নেতারা বিদেশে গেছেন। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও কর্মসূচিকেন্দ্রিক ব্যস্ততা বেশি থাকার সম্ভাবনা থাকায় আগেই শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে চান নেতারা।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে জানান, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২৪ আগস্ট সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। তার সঙ্গে স্ত্রী ও কন্যা গেছেন। গত ২৭ জুন থেকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিচ্ছেন স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ বলে জানান শায়রুল কবির।
শনিবার (২৬ আগস্ট) চিকিৎসা গ্রহণের উদ্দেশ্যে সিঙ্গাপুর গেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। একইসঙ্গে তিন জন গুরুত্বপূর্ণ নেতার সিঙ্গাপুর গমনের বিষয়টি নিয়ে দলে আলোচনা চলছে।
এর আগে থেকেই থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনিও চিকিৎসাজনিত কারণে বিদেশে অবস্থান বলে জানান দলের একজন নেতা।
চিকিৎসার কাজে দীর্ঘদিন ধরে দিল্লিতে অবস্থান করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ। চলতি বছরের মার্চে ভারতের শিলং আদালত তাকে খালাস দিলে কিছুদিন পর তিনি দিল্লি যান। সেখানে তিনি স্ত্রীসহ অবস্থান করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ১৪ সদস্যের মধ্যে ছয় জনই এখন দেশের বাইরে। শর্তসাপেক্ষ মুক্তিতে গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া, অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। গত মে মাসে স্ত্রী নুর আকতারকে হারান জমির উদ্দিন। এরপর থেকে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অনিয়মিত হয়ে পড়েন তিনি। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে টানা বিছানায় শয্যাশায়ী রফিকুল ইসলাম মিয়া। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় রয়েছেন।
সিনিয়র নেতারা দেশের বাইরে থাকায় যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচিতে প্রভাব পড়বে কিনা— এমন প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আন্দোলন তো চলছে। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ (শনিবার) দেশের সব মহানগরে কর্মসূচি চলছে। আমাদের নেতারা নানা কারণে দেশের বাইরে রয়েছেন। আন্দোলনে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। আমাদের সাংগঠনিক নেতৃত্ব কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে।’
বিএনপির নীতিনির্ধারণী ও যুগপতে যুক্ত গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা আভাস দিয়েছেন, যুগপতের পরের ধাপের কর্মসূচিতে নিম্ন আদালতের সামনে অবস্থান, উচ্চ আদালতের সামনে অবস্থানসহ এ ধরনের কর্মসূচি থাকতে পারে।
একাধিক নেতার ভাষ্য, বিএনপিতে হরতাল ও অবরোধ নিয়ে আলোচনা চলছে। দলের ভেতর থেকে নীতিনির্ধারকদের ওপর কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার চাপ অব্যাহত রয়েছে। সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত ধাপে হরতাল, অবরোধ ও ঘেরাও কর্মসূচির চিন্তা থাকতে পারে বিএনপিতে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী নেতা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, আন্দোলনের মাত্রার উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই সরকারবিরোধী কর্মসূচি চলবে। এক্ষেত্রে দেশের নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে মার্কিন অবস্থানকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সেলিমা রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ সপ্তাহেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
দলের ফরেন উইংয়ের একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বৈঠক ও আলোচনা হলেও বিএনপির সেই সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ। দিল্লিতে বেশ কিছুদিন ধরে ভারত সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছাকাছি আসার দেনদরবার চললেও ‘উদ্যোক্তা নেতারা’ বেশি একটা সুবিধা করতে সক্ষম হননি। তবে এ নিয়ে উদ্যোক্তা-পক্ষের ‘আত্মতুষ্টি’ আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘না, না (হাসি দিলেন)। আমার জানা নেই এ বিষয়টি। আর গেলে তো নিশ্চয়ই আপনারা জানবেন।’
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন