-
* আমাদের কিছু কিছু কর্মসূচি ইংল্যান্ডে প্রথম, যেমন সেকেন্ডারি স্কুলে ফ্রি স্কুল মিল, ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস, এবং ফ্রি হোম কেয়ার;
-
* একটি ঘরের জন্য অনেক পরিবার অবর্ণনীয় কষ্ট করছেন, যা আমাকেও ব্যথিত করে। প্রতি মাসে যে ৪শ/৫শ মানুষের সাথে দেখা করি, তাদের বেশির ভাগই হাউজিং সমস্যায় যুক্ত;
-
* ইয়ুথ সার্ভিসে ১৩.৭ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ, যা অন্যান্য বারার তুলনায় অনেক বেশি এবং এর পাশাপাশি আমাদের নজর ‘কস্ট অব লিভিং‘-এর দিকে, নতুন গ্রান্টস রিলিজ হবে ১৫ হাজার পরিবারের জন্য;
টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান নগরবাসীর জন্য গত ১২ মাসে কী কী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত নির্বাহী মেয়র তাঁর মেয়াদের চার বছরের জন্য যে ১২৩টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার মধ্যে প্রথম বছরেই প্রায় ৪০টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন অথবা গৃহীত প্রজেক্টগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ দিয়ে এক অনন্য রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন।
নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বে কাউন্সিলের নতুন প্রশাসনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ১ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে হোয়াইটচ্যাপেল-এ কাউন্সিলের নবনির্মিত টাউন হলে এক মিডিয়া ব্রিফিং এর মাধ্যমে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
২০২২ সালের ৫ মে তিনি এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন আসপায়ার পার্টি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কাউন্সিলের ক্ষমতায় আসে এবং তিন মাসের মাথায় অর্থাৎ গত বছরের আগস্ট মাসে কাউন্সিলের স্ট্রাটিজিক প্লানে মেয়র লুৎফুর রহমানের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখিত এজেন্ডাগুলো অন্তর্ভুক্ত হয় বলে ওই ব্রিফিং-এ জানানো হয়।
বিপুল সংখ্যক সাংবাদিকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত মিডিয়া ব্রিফিং-এ ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলার মাইয়ুম মিয়া তালুকদার, হেড অব মেয়র অফিস এমি জ্যাকসন, ডেপুটি হেড আলিবর চৌধুরীসহ কাউন্সিলের উর্ধতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিং শেষে সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের গোটা টাউন হল ঘুরিয়ে দেখানো হয়। ঐতিহাসিক রয়েল লন্ডন হসপিটালের গ্রেড-টু বিল্ডিং কে ১২৫ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে নতুন টাউন হল হিসেবে রূপান্তরে ঐতিহ্যের পাশাপাশি আধুনিকায়নের অপূর্ব মিশেল দেখে অতিথিরা প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য, নিজস্ব টাউন হল স্থাপন করায় বছরে ১৬ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় হবে।
মিডিয়া ব্রিফিংকালে নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেছেন, বারার বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নত করার জন্য আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা ৮ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলাম। স্থানীয় জনসাধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সবগুলো বিষয় এই ৮টি পয়েন্টে অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
এই ৮ দফা হলোঃ (১) ট্যাকলিং কস্ট অব লিভিং ক্রাইসিস (জীবনযাত্রা ব্যয় বৃদ্ধির সংকট মোকাবেলা; (২) হোমস ফর ফিউচার (ভবিষ্যতের জন্য ঘর-বাড়ি; (৩) এক্সিলারেট এডুকেশন (সেরা মানের শিক্ষা; (৪) বোস্ট কালচার, বিজনেস, জব এন্ড লেজার (সংস্কৃতি, ব্যবসা, কর্মসংস্থান ও অবকাশ সুবিধার উন্নতি; (৫) ইনভেস্ট ইন পাবলিক সার্ভিস (গণ সেবাখাতে বিনিয়োগ); (৬) এমপাওয়ার কমিউনিটি টু ফাইট ক্রাইম (অপরাধ মোকাবিলায় কমিউনিটিকে ক্ষমতায়ন করা; (৭) ক্লিন এন্ড গ্রীন ফিউচার (দূষণমুক্ত ও সবুজ ভবিষ্যত) এবং (৮) এ কাউন্সিল দ্যাট লিসেন টু ইউ (আপনার কথা শুনে – এমন কাউন্সিল)।
মিডিয়া ব্রিফিং-এ জানানো হয়, ইতিমধ্যে মেয়র লুৎফুর রহমানের কিছু কর্মসূচি বা উদ্যোগ ইংল্যান্ডের মধ্যে প্রথম হওয়ায় বিবিসি সহ মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রাইমারি স্কুলের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো সেকেন্ডারি স্কুল পর্যায়ে ইউনিভার্সেল ফ্রি মিলস্ (সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ) সুবিধা চালু, ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস, ও এডুকেশন মেইনটেন্যান্স এলাউন্স এবং ফ্রি হোম কেয়ার সার্ভিসেস প্রবর্তন করেছেন। এছাড়া, ইয়ুথ সার্ভিসের ক্ষেত্রে বাজেট কর্তনের মত জাতীয় ট্র্যান্ড বা ধারার বিপরীতে গিয়ে বারায় ইয়ুথ সার্ভিসকে পুনর্জীবিত করার জন্য অর্থাৎ গোটা বারা জুড়ে নতুন নতুন (২০টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে) ইয়ুথ সেন্টার বা ইয়ুথ প্রজেক্ট চালুর জন্য বছরে প্রায় ১৪ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে নির্বাহী মেয়র দাবি করে বলেন, এমন বরাদ্দ গোটা দেশের আর কোনো কাউন্সিল করবে না।
এছাড়া বারার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো উন্নত ও সুসংহত করতে নতুন করে ৪১ জন এনফোর্সমেন্ট অফিসার নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটস্ এনফোর্সমেন্ট টিমকে প্রায় ৭০ জনে নিয়ে যাওয়া এবং পর্যায়ক্রমে অন্তত ৩৩ জন অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর যথেষ্ট সক্রিয়তার সাথে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে চার বছরে ৪ হাজার সোস্যাল রেন্টেড ঘর নির্মাণের কর্মসূচি। ইতিমধ্যে সোস্যাল বা প্রাইভেট ল্যান্ডলর্ড ছাড়াও নতুন ঘর নির্মাণের জন্য কাউন্সিল বারার মধ্যে বেশ কিছু জায়গা নির্ধারন করতে সক্ষম হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জন্য ট্যাক্স ফ্রিজ রাখা লন্ডনের মাত্র তিনটি কাউন্সিলের অন্যতম একটি হচ্ছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। এর ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির এই কঠিন সময়ে টাওয়ার হ্যামলেটস সহ অন্য দুটি কাউন্সিলে থাকবে অপরাপর বারার তুলনায় কম কাউন্সিল ট্যাক্স।
ব্রিফিংকালে নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, ‘দেশের যে কোন লোকাল অথরিটির তুলনায় সবচেয়ে উচ্চাকাক্সক্ষার এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছি আমরা। নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আমাদের শুরুটা ভালো হয়েছে, তবে অবশ্যই আরো অনেক কিছু করার রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সার্ভিস উন্নত ও কার্যকর করাই আমাদের অন্যতম আগ্রাধিকার। এছাড়াও আমরা বারার ভবিষ্যত বিনির্মাণে ভূমিকা রাখছি যেমন টাওয়ার হ্যামলেটস হোমসকে পুরোপুরি কাউন্সিল নিয়ন্ত্রণে আনা। একই সাথে আমরা লেজার সার্ভিস ও ইয়ুথ সার্ভিসকেও কাউন্সিলের অধীনে নিয়ে আসছি। অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ এই সার্ভিসগুলো সরাসরি কাউন্সিলের অধীনে আনার ফলে আরো ভালো ও উন্নত সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি এবং এতে করে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য আরো বেশি চাকুরীর সুবিধা তৈরি হবে।’
মেয়র লুৎফুর বলেন, ‘সাধারণ মানুষের সাথে উঠা-বসা-কথা বলায় আমার বাড়তি আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু কাউন্সিলের অফিসিয়াল দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের পাশে ব্যক্তিগতভাবে বা ইভেন্টের মাধ্যমে সব সময় ছুটে যাওয়া সহজ হয়ে উঠে না, যা আমার জন্য কষ্টকর। তবে, প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও সোমবার নিয়মিত ২টি সার্জারি করার মাধ্যমে মাসে প্রায় ৫শ’ মানুষের সাথে সরাসরি দেখা করার, কথা বলার এবং তাদের বক্তব্য শোনার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
বারার এডুকেশন ও ইয়ুথ সার্ভিসে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়ার কথা উল্লেখ করে মেয়র লুৎফুর বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির চরম এই দুঃসময়ে বারার বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াতে আমরা ‘কস্ট অব লিভিং’ প্রজেক্টগুলোতে বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছি। আমরা জানি এই কঠিন দিনে, অর্থনীতির চলমান বিপদের এই সময়ে আমরা যতটুকু সম্ভব স্বল্প আয়ের মানুষের পাশে থাকতে চাই। তাই যারা ফ্রি স্কুল মিল পায় তারা যেন স্কুল হলিডে চলাকালীন সময়েও প্রোটিনযুক্ত খাবার পায়- সেটা নিশ্চিত করতে আমরা শিশু প্রতি হলিডে গ্রান্ট হিসেবে ১শ’ পাউন্ড বরাদ্দ রেখেছি। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোর জন্যও রয়েছে বিশেষ বরাদ্দ। আর প্রায় ৭ হাজার পেনশনারকেও আমরা ১শ’ পাউন্ড করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। অর্থনৈতিক চাপ মোকাবেলায় সহযোগিতার অংশ হিসেবে আমরা কাউন্সিল ট্যাক্স ফ্রিজ রেখেছি, সাথে সাথে এ ক্ষেত্রেও ঝুঁকিতে থাকা পরিবারের জন্য রয়েছে বাড়তি সহযোগিতা। সবমিলিয়ে এই ক্ষেত্রে আমাদের বাজেট ৬.১ মিলিয়ন পাউন্ড। এছাড়া ১৫ হাজার পরিবারের জন্য আমরা শিগগিরই আরেকটি ফ্যামেলি গ্রান্ট রিলিজ করবো।’
মেয়র বলেন, ‘আমি এবং আমাদের কেবিনেট মেম্বার ফর হাউজিং কাউন্সিলার কবির আহমেদ সহ পুরো টিম কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। চার বছরে ৪ হাজার সোস্যাল হাউজ সরবরাহের যে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি, সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা দিন-রাত সময় দিচ্ছি। শুধুমাত্র হাউজিং নিয়ে গত তিন সপ্তাহে আমরা ৩টি প্রায় দিনব্যাপী এওয়ে মিটিং (এক নাগাড়ে ৫/৬ ঘণ্টা)করেছি। আমাদের সকল কর্মপরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে আমরা সবার কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চাই।’
লুৎফুর রহমান বলেন, ‘আমি যখন প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র ছিলাম, তখন মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ‘ডিলার এ ডে’ নামে একটি অভিযান গ্রহণ করেছিলাম যার লক্ষ্যনীয় প্রভাব বাসিন্দারা বাস্তবে দেখতে পেরেছিলেন। বিশেষ ওই অভিযানে শুধুমাত্র পথেঘাটে ছোটখাটো ড্রাগ ক্রেতা বা বিক্রেতাকে টার্গেট না করে বড় বড় ডিলারদের পাকড়াও করা হতো। আবারো আমরা সেরকম সক্রিয়তা চাই। যদিও এই সমস্যা কখনোই পুরোপুরি নির্মূল করা যাবে না। তবে এ ব্যাপারে আমাদের সার্বক্ষণিক প্রয়াস থাকতেই হবে, তাতে সমস্যাটা কমে আসবে। এছাড়া আবারো আমরা সক্রিয়ভাবে চালু করবো ড্রাগ পুনর্বাসন প্রজেক্ট। আমরা কমিউনিটি সেফটির জন্য ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ দিয়েছি। ইতিমধ্যে টাওয়ার হ্যামলেটস্ এনফোর্সমেন্ট অফিসার (থিও) পদে নতুন করে আরো ৪১ জনকে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে ২৬ জন থিও দায়িত্ব পালন করছেন।’
অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে এই পুলিশ অফিসারদের পেতে হবে মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছ থেকে। আমরা অনেক দিন থেকেই অপেক্ষায় আছি। মেট পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন, তাদের নিজস্ব জনবল কম, তবে ধাপে ধাপে আমাদের চাহিদা তারা পূরণ করবেন। ৭ বছর আগে আমি যখন মেয়র ছিলাম, তখন একসাথে ৪০ জন অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগ করেছিলাম। এখন নতুন করে হয়তো ১০ জন ১০ জন করে পাবো। সর্বশেষ মেয়র অতিরিক্ত পুলিশ একেবারে কমিয়ে ফেলেছিলেন। বর্তমানে আছেন মাত্র ১২ জন। আমরা এটাও মনে করি যে, কমিউনিটি সেফটি অর্থাৎ জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুধুমাত্র পুলিশ আর আইন দিয়ে সম্ভব হবে না, সাথে সাথে দরকার সমাজ সচেতনতা।’
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলার মাইয়ুম মিয়া তালুকদার বলেন, ‘মেয়র বা মেয়র অফিস অলসভাবে বসে বসে আরাম করার জন্য নয়। আসুন দেখে যান আমাদের এক্সপার্টরা, আমাদের টিম মেম্বাররা জনগণের স্বার্থে জনগুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা বাস্তবায়নে কীভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন। অতীতে আমরা যখন দায়িত্বে ছিলাম তখন ১২৩ মিলিয়ন পাউন্ড সেভিং বা সাশ্রয় করেও জনগুরুত্বপূর্ণ সকল সার্ভিস চলমান রেখেছিলাম। কোনো সমস্যা হয়নি। এবারও আমরা বাসিন্দাদের প্রত্যাশা অনুযায়ি সার্ভিসগুলো প্রদান করেও ৩৭ মিলিয়ন সেইভিং করতে সক্ষম হবো।কাউন্সিলের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট ও স্কুল স্টাফ মিলিয়ে ১২ হাজারের বেশি কর্মী রয়েছে। কিন্তু জনগণের বিপুল রায়ে নির্বাচিত মেয়র ও তুমুলভাবে সক্রিয় একটি মেয়র অফিস হচ্ছে পুরো কাউন্সিলের প্রাণ কেন্দ্র। কাউন্সিল পরিচালনায় নির্বাহী মেয়রাল সিস্টেম তো এ কারনেই। জনগণের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দ্রুততার সাথে তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতেই কাজ করে মেয়র অফিস। নির্বাহী মেয়রের পক্ষে সব কাজ একা করা সম্ভব নয়। তাকে এক্সপার্টদের কাছ থেকে সঠিক পরামর্শ নিতে হয়, টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে এগোতে হয়।’
উল্লেখ্য পুরো ইউকে’র মধ্যে একমাত্র এথনিক নির্বাচিত মেয়র হিসেবে ২০১০ সালেই ব্রিটিশ প্রভাবশালী রাজনীতিকের তালিকায় আসেন লুৎফুর রহমান। কিন্তু ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার পর ইলেকশন ট্রাইব্যুনালের এক সিদ্ধান্তে ২০১৫ সালে তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হয়। অবশেষে অন্তত চার দফা তদন্ত আর প্রায় ৪ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করার পর পুলিশ জানায়, ‘লুৎফরের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই’। আর তাই ২০২২ সালের মে মাসের নির্বাচনে তাঁর ফিরে আসার ব্যতিক্রমী কাহিনী স্থানীয় ও মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। প্রায় ৪১ হাজার ভোটে তৃতীয়বারের মত নির্বাহী মেয়র পদে জয়লাভ করে দেশব্যাপি আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এবার তাঁর সাথে নির্বাচিত হয়েছেন তাঁর দল আসপায়ার পার্টির ২৪ জন কাউন্সিলার। সেই সূত্রে প্রথমবারের মতো কোনো ইন্ডিপেন্ডেন্ট গ্রুপ (স্থানীয় ভিত্তিক গ্রুপ) পেল নিরঙ্কুশ মেজরিটি।
৪০টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন :
মেয়র জানান, ‘নির্বাচনের আগে আমরা ৮টি পয়েন্টে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলাম। প্রতিটি পয়েন্টের আওতায় গত এক বছরে যে অর্জন ও অগ্রগতি হয়েছে, এর সারাংশ নিচে তুলে ধরা হলো।’
ক. ট্যাকলিং কস্ট অব লিভিং ক্রাইসিস (জীবনযাত্রা ব্যয় বৃদ্ধির সংকট মোকাবেলা) :
১. বারার নিম্ন ও স্বল্প আয়ের পরিবার গুলোকে সহায়তা দিতে ৬.১ মিলিয়ন পাউন্ডের ‘কস্ট অব লিভিং প্রজেক্টস’ গ্রহণ। এর মধ্যে রয়েছে, স্কুল হলিডের সময় নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ পাউন্ড করে প্রদান, ‘রিস্ক অব প্রোভার্টি লেভেলে’ অর্থাৎ দরিদ্র হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা পরিবারের সন্তানদেরকেও ১০০ পাউন্ড করে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং নতুন করে আরো ১৫ হাজার পরিবারকে অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত, ৭ হাজার পেনশনারকে ১০০ পাউন্ড করে প্রদান;
২. বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্যে ২.২ মিলিয়ন খাবার (বিনামূল্যে) তৈরি করা হয়েছে;
৩. কাউন্সিল ট্যাক্স রিডাকশন স্কিমের আওতায় ৩৫১৭২ জনকে ৩১.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের সহায়তা প্রদান;
৪. শীতকালে জ্বালানীর খরচ বাঁচাতে স্থাপিত ওয়ার্ম হাব—এ ২২৩৪৩ জনের সেবা গ্রহণ;
৫. কাউন্সিল ট্যাক্স ফ্রিজ (এডাল্ট সোস্যাল কেয়ার —এর কন্ট্রিবিউশন ছাড়া);
খ. হোমস ফর ফিউচার (ভবিষ্যতের জন্য ঘর-বাড়ি) :
৬. ২২ হাজার প্রোপার্টি সহ হাউজিং ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস ইন হাউস নিয়ে আসা, অর্থাৎ সরাসরি কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা;
৭. ২২৭ জন হোমলেসকে (গৃহহীন) সাসটেইনেবল ঘর প্রদান;
৮. ৩১ টি পরিবারকে হুইলচেয়ার একসেস ঘর প্রদান (প্রজেক্ট ১২০-এর মাধ্যমে) ;
৯. ২০২৬ সালের মধ্যে নূন্যতম ৪ হাজার ঘর নির্মানের টার্গেট, এবং ৩–৪ বেডরুম বিশিষ্ট ঘর নির্মানে অগ্রাধিকার দেয়া;
গ. এক্সিলারেট এডুকেশন (সেরা মানের শিক্ষা) :
১০. প্রাইমারি স্কুলের (বাজেট ২ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ) পাশাপাশি সেকেন্ডারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ফ্রি স্কুল মিল (বাজেট ৩.৭ মিলিয়ন পাউন্ড), যা গোটা দেশের মধ্যে প্রথম;
১১. ৪০০ স্টুডেন্টকে ইউনির্ভাসিটি বার্সারী বা আর্থিক অনুদান প্রদান (বাজেট ৬০০ হাজার পাউন্ড) ;
১২. ‘এ’ লেভেলের শিক্ষার্থীদের এডুকেশন মেইনটেন্সে এলাউন্স প্রদান (বাজেট ৩২১ হাজার পাউন্ড) ;
১৩. আর্লি হেল্প সার্ভিসের মাধ্যমে ১৭৭৮৩ শিশুকে সহযোগিতা;
১৪. বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়াতে ৭৩০ হাজার পাউন্ড বরাদ্দ;
ঘ. বুস্ট কালচার, বিজনেস, জব এন্ড লেজার (সংস্কৃতি, ব্যবসা, কর্মসংস্থান ও অবকাশ সুবিধার উন্নতি) :
১৫. কমিউনিটি ল্যাংগুয়েজ সার্ভিসের জন্য বছরে ৮ শ হাজার পাউন্ড বাজেট বরাদ্দ;
১৬. ৮ শ’ ব্যবসার জন্য ২ মিলিয়ন পাউন্ডের রেট রিলিফ;
১৭. লেজার সার্ভিস কাউন্সিলের কর্তৃত্বে নিয়ে আসা (বাজেট ৪০ মিলিয়ন পাউন্ড) ;
১৮. কাউন্সিলের বিজনেস প্রোগ্রামের আওতায় ৯১৯ ব্যবসাকে সহযোগিতা প্রদান;
১৯. চাকুরী, ট্রেনিং এপ্রেনটিশিপ–এর ৩৮৮৬ সুযোগ তৈরি;
২০. বারার মার্কেটগুলোর জন্য ১ ঘণ্টা ফ্রি পার্কি সুবিধা;
২১. ৪টি প্যারেন্টস পার্কিং জোন পুনরায় চালু;
ঙ. ইনভেস্ট ইন পাবলিক সার্ভিস (গণ সেবাখাতে বিনিয়োগ) :
২২. ইয়ুথ সার্ভিস নতুন করে গড়ে তুলতে ১৩.৭ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ, ২০ টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে হবে ইয়ুথ সেন্টার বা ইয়ুথ প্রজেক্ট;
২৩. মেয়র কমিউনিটি গ্র্যান্টস – এর জন্য ৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ;
২৪. প্রবীণদের জন্য ২.৫ মিলিয়ন পাউন্ড-এর ফ্রি হোম কেয়ার;
২৫. ৫টি রেসিডেন্টস হাবের জন্য ১.১ মি বরাদ্দ;
চ. এমপাওয়ার কমিউনিটি টু ফাইট ক্রাইম (অপরাধ মোকাবিলায় কমিউনিটিকে ক্ষমতায়ন করা) :
২৬. ২৮৯টি সিসিটিভি স্থাপনের জন্য অতিরিক্ত বিনিয়োগ (বাজেট ২০০ হাজার পাউন্ড) ;
২৭. ৭৭৭৯ ঘণ্টা অতিরিক্ত সাদা পোশাকধারী পুলিশের টহল (বাজেট ১.৫ মিলিয়ন পাউন্ড) ;
২৮. ৪১ জন নতুন এনফোর্সমেন্ট অফিসার (থিইও) নিয়োগের উদ্যোগ (বাজেট ২.৯ মিলিয়ন পাউন্ড) ;
২৯. অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগের জন্য ১.৬ মিলিয়ন পাউন্ড সহ সামগ্রিক কমিউনিটি সেফটির জন্য ৪.৪ মি পাউন্ড বরাদ্দ;
ছ. ক্লিন এন্ড গ্রীন ফিউচার (দূষণমুক্ত ও সবুজ ভবিষ্যত) :
৩০. এনার্জি সেভিং প্রজেক্ট এর জন্য স্মল বিজনেস গ্র্যান্ট –এর আওতায় ১৮৫ হাজার পাউন্ড খরচ;
৩১. ৯৭২ টি বৃক্ষ রোপন;
৩২. হাউজিং এস্টেট-এ রিসাইক্লিন বাড়াতে ২.১ মিলিয়ন পাউন্ড বরাদ্দ;
৩৩. ইলেকট্রিক ওয়েস্ট বাস ক্রয়ের জন্য ৫ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়;
৩৪. লো কার্বন ফুয়েল সাপ্লাই-এর জন্য ১৮০ হাজার পাউন্ড বরাদ্দ;
৩৫. মেয়র’স ক্লাইমেট অ্যাডভাইজারি বোর্ড গঠন;
জ. ‘এ কাউন্সিল দ্যাট লিসেন টু ইউ’ (আপনার কথা শুনে — এমন কাউন্সিল) :
৩৬. ক্রিসপ স্ট্রিট মার্কেট আইডিয়া স্টোর আবারো চালু (বাজেট ৪৮৭ হাজার পাউন্ড) ;
৩৭. সপ্তাহে দুই দিন মেয়রস্ সার্জারি, যার ফলে মাসে প্রায় ৫শ বাসিন্দার সাথে মেয়রের সরাসরি সাক্ষাৎ;
৩৮. বারা জুড়ে লাইফ সেভিং ইকুইপমেন্ট স্থাপন ;
৩৯. বাসিন্দাদের বক্তব্য, অভিমত, অভিযোগ শুনতে ৮০টি কনসালটেশন-এ ১১ হাজার মানুষের অংশগ্রহণ; এবং
৪০. বারার প্রাণকেন্দ্র হোয়াইটচ্যাপেল এ নতুন টাউন হল–এর যাত্রা শুরু।