অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। শীত খুব পড়েছে, উত্তরবঙ্গে বেশি হলেও দেশের অন্যত্র কম নয়। কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহ আসবে যাবে এমন আগাম বার্তা আবহাওয়াবিদদের। এ সময় হচ্ছে শীতের অসুখ। বেশি হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ আর ভঙ্গুর স্বাস্থ্যের অধিকারী মানুষের।
ইতিমধ্যে শীতের প্রকোপে মৃত্যু হয়েছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে বয়স্করা বেশি। এমন শীতে গায়ে কেবল কাঁটা দেওয়া আর শীত আছেই কিন্তু এর প্রভাব বেশি পড়ে হার্টের উপর। কার্ডিয়াক এরেস্টের আশঙ্কা বেশি। হৃদবিশেষজ্ঞরা বলেন, এই শৈত্যপ্রবাহ কেবল যে বয়স্কদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে তাই নয় তরুণরা ও রেহাই পাচ্ছে না।
নতুন দিল্লির একজন সিনিয়ার কার্ডিওলজিস্ট বললেন, প্রচণ্ড শীতে হার্ট অ্যাটাক বেশি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
তীব্র শীতে সংকুচিত হয় রক্তনালী এর দেয়ালের ক্ষুদ্র পেশি সঙ্কুচিত হয়ে সরু করে দেয় রক্তনালী। হৃদপিণ্ডে রক্তনালী “করোনারি ধমনী” রক্ত জমাট পিণ্ড হয়ে হয় হার্ট অ্যাটাক। প্রবল শীতে রক্তে ফাইব্রিনজেন মান বাড়ে ২৩%, বাড়ে প্লাটিলেটের মাত্রাও। এর ফলে রক্ত জমাট বাঁধে, হয় হার্ট অ্যাটাক।
নরথয়েস্টারন মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, শীতের সময় দেহে তাপ বজায় রাখার জন্য হার্ট হয় অতি সক্রিয়। শরীর তাপ হারায় দ্রুত। দেহ তাপ ৯৫ ডিগ্রির কম হলে হাইপোথারন্মিয়া হয়ে হতে পারে কারডিয়াক অ্যারেস্ট।
শীতের সকালে পায়চারি বা বাইরে না হাঁটাই ভালো। সকালের শীতে পায়চারি হতে পারে লোভনীয় কিন্তু তা বাড়াতে পারে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।
গবেষকরা বলেন, সকাল ৪ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত নরেপিনেফ্রিন আর করটিসল হয় বেশি সক্রিয়, বাড়ে অক্সিজেনের চাহিদা আর রক্তচাপ। যাদের ডায়াবেটিস আছে, উচ্চ রক্তচাপ আর ফুসফুসের অসুখ তাদের এমন শীতে প্রাতঃ ভ্রমণ এড়ানো উচিত। শৈত্যপ্রবাহ বাড়ায় রক্ত চাপ আর হার্ট স্পন্দিত হয় দ্রুত; যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য এসব লক্ষণ শুভ নয়।
হার্ট অ্যাটাকের সতর্ক সংকেত
বুক ব্যথা
বমি ভাব
মাথা ঝিম ঝিম করা
শ্বাস নিতে সমস্যা
চোয়াল ঘাড় গ্রীবায় ব্যাথার অবশ অনুভূতি
অবিরাম ক্লান্তি
এমন প্রবল শীতে হার্ট অ্যাটাক এড়াতে
১। রোদ উঠার আগে প্রাত ভ্রমণ, হাঁটা হাটি করা যাবে না
২। শরীরে গরম জামা আর মাথা যেন ভাল করে মুড়ে বেরুনো হয়।মাথার সারফেস এরিয়া বড় তাই সেখান থেকে তাপহানি হয় বেশি।
৩। এমন শীতে নেয়া উচিত ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট। ভিটামিন ডি ঘাটতি হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কারণ বলেন দিল্লির একজন প্রখ্যাত হৃদবিশেষজ্ঞ মনজিত কুমার।
৪। নিয়মিত চেক করুন রক্তের গ্লুকোজ আর রক্তের চাপ
৫। চর্বিবহুল, তৈলাক্ত ভাজা খাবার পরিহার করুন
৬। অ্যালকোহল পান আর ধূমপান পরিহার করুন
৭। সুষম পুষ্টিকর খাবার খান