ঈদের দ্বিতীয় দিনেও সকাল থেকে সাভারের ট্যানারিতে আসছে কাঁচা চামড়া। চামড়া সংরক্ষণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। বিশেষ করে চামড়ার প্রক্রিয়ার কেমিক্যালের ঊর্ধ্বমুখী দামে দিশাহারা ট্যানারি মালিকরা। আগের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল।
আন্তর্জাতিক বাজারে কেমিক্যালের ঊর্ধ্বগতি তার মূল কারণ বলে দাবি মালিকদের।
শুক্রবার (৩০ জুন) সাভারের হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরীতে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা ও আশপাশের কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া আসছে সাভারের কারখানাগুলোত। ট্রাক থেকে এসব কাঁচা চামড়া নামিয়ে লবণ মাখিয়ে থরে থরে সাজিয়ে রাখছেন শ্রমিকরা। আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করবেন ট্যানারি মালিকরা।
এর প্রায় এক সপ্তাহ পর থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে লবণ মাখানো চামড়া সংগ্রহ করা হবে আড়তদারের কাছ থেকে। বর্তমানে চামড়াশিল্প নগরীতে প্রায় ১৪২টি কারখানা চালু রয়েছে।
কাঁচা চামড়ার দাম কম দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে ট্যানারি মালিকরা জানান, চামড়ার দাম নির্ধারিত হয় চামড়ার মানের ওপর। সঠিক নিয়মে পর্যাপ্ত পরিমাণ লবণ না মাখালে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চামড়ার দামও কমে যায়।
গোল্ডেন লেদার ইন্ডাস্ট্রি নামে কারখানা মালিক জাফর চৌধুরী বলেন, মানুষ যে চামড়ার দাম না পেয়ে ফেলে দেয় আমরা ড্রেন থেকে যদি সেই চামড়া কুড়িয়েও নিয়ে আসি। তাতেও আমাদের লাভ হবে না। কারণ চামড়ার দাম যদি হয় ১০ টাকা, সেই চামড়া প্রসেস করতে আরো ৪০ টাকার কেমিক্যাল প্রয়োজন হয়। এই কারণে চামড়া যদি আরো কম দামেও কেনা হয় বা ফ্রি পাই তা-ও লাভ নিয়ে সন্দেহ আছে।
সাভার চামড়াশিল্প নগরীর কেমিক্যাল ব্যবসায়ী খায়রুল বাশার সোহেল বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কেমিক্যালের দাম বেড়েছে। ডলারের দামও বেশি। আমাদের হাতে তো কিছু নেই। গত এক বছরে কেমিক্যালের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। সরকারেরও আসলে তেমন কিছু করার নেই।
ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একেবারেই যে সিন্ডিকেট হয় না তা বলব না। তবে দামের ক্ষেত্রে তা খুব একটা প্রভাব ফেলে না।
হাজারীবাগের চামড়া ক্রেতা সুলতান লেদার গ্যালারির স্বত্বাধিকারী মোফাজ্জল ইবনে মাসুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্পষ্ট দুটি কারণ আছে চামড়ার দাম কমার জন্য। একটি হচ্ছে আমাদের রপ্তানি করার জায়গা হচ্ছে চায়না। আগে ইউরোপে যেত, তখন দাম বেশি পাওয়া যেত। এখন শুধু চায়না। যেই দামে চামড়া বিক্রি করা হয় তার চেয়ে বেশি খরচ হয়ে যায় চামড়া প্রসেস করতে। চামড়া যদি ইউরোপে পাঠানোর সুযোগ হয় তাহলে আবার চামড়ার দাম বাড়বে। এ ছাড়া কেমিক্যাল ও লবণের বাড়তি দাম তো আছেই। এই দাম না কমালে ফ্রি চামড়া নিলেও লাভ নিয়ে সন্দেহ আছে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, আমাদের এ বছরের টার্গেট এক কোটি পিস। ঈদের দিন আমরা প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করেছি। এখন ট্যানারিতে সাধারণ শ্রমিকদের পাশাপাশি মৌসুমি শ্রমিকরা কাজ করছেন। আশা করছি আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে এবার। গতবার আমরা প্রায় ৯০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম।
পরিবেশের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিনদিন ট্যানারি নগরীর পরিবেশ ভালো হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর বেশ কিছু কারখানাকে পরিবেশ ছাড়পত্র দিয়েছে। এ ছাড়া অনেক কারখানায় পরিবেশ ছাড়পত্রের মেয়াদ শেষ হলেও নবায়ন হচ্ছিল না। এখন সেগুলো নবায়ন হচ্ছে। আমাদের মূল লক্ষ্য এলডাব্লিউজি সনদ। তখন আগের চেয়ে বেশি দাম পাওয়া যাবে চামড়ার। বেশি দামে বিক্রি করতে পারলে আমরা বেশি দামে চামড়া কিনতে পারব।
সূত্র : কালের কণ্ঠ