ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে নিজেকে বিস্তীর্ণ মরুভূমির উপত্যকায় একটি প্রত্যন্ত রাস্তার পাশে আবিষ্কার করেন। সঙ্গে তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। একদিন আগে গুলিতে ২০ এবং ১৫ বছর বয়সী ব্রিটিশ-ইসরায়েলি দুই বোন নিহত হন এই জায়গায়। এখন খুনিকে ধরতে অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
ইসরায়েলি টেলিভিশনে নেতানিয়াহু বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ। নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পূর্ণ আস্থা আছে আমাদের।’ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন এখন অনেকটাই কমে গেছে। চলতি সপ্তাহে চারদিক থেকে ব্যাপক হামলার শিকার হয়েছে ইসরায়েল। পূর্ব জেরুজালেম, পশ্চিম তীর, গাজা, লেবানন এবং সিরিয়া থেকে ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ছে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে।
মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী সৌদি আরব। দেশটির সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক চাইছে ইসরায়েল। তবে রিয়াদ এখন তেল আবিবের বড় শত্রু তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টায় ব্যস্ত।
এসবের মধ্যেই বিচার বিভাগের ওপর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকারের হস্তক্ষেপের পরিকল্পনার প্রতিবাদে হাজার হাজার ইসরায়েলি বিক্ষোভ করেছে। ইসরায়েলের কয়েক ডজন সাবেক ঊর্ধ্বতন প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তা গণতন্ত্রবিরোধী বলে সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করার এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন।
জনসাধারণের চাপ প্রধানমন্ত্রীকে তার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটতে বাধ্য করেছিল। পরে তিনি ঘোষণা দেন যে সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করার আইন পার্লামেন্টে পাস না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হবে।
এদিকে শনিবার ফাঁস হওয়া পেন্টাগনের নথিতে ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ তার কর্মীদের পাশাপাশি ইসরায়েলি জনসাধারণকে প্রতিবাদ আন্দোলনে অংশ নিতে উৎসাহিত করেছে বলে উঠে এসেছে।
সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং আইডিএফ চিফ অব স্টাফ মোশে ইয়ালন শনিবার রাতে তেল আবিবের একটি বিক্ষোভে বলেন, ‘আমি কয়েক দশক ধরে সেনাবাহিনীতে কাজ করেছি। নেতানিয়াহুর এখনকার মতো বেপরোয়া আচরণ আগে দেখিনি।’
দুর্নীতি কেলেঙ্কারি ও ‘আলোচিত’ ব্যক্তিগত জীবন থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার আগের পাঁচটি মেয়াদে নেতানিয়াহুকে সাধারণত ইসরায়েলিদের সুরক্ষার প্রশ্নে একটি নিরাপদ হাত হিসেবে দেখা হত।
চরমপন্থি এবং উগ্র ধর্মীয় দলগুলোর বর্তমান জোটে ভোট দেওয়া ডানপন্থি জনসাধারণের মধ্যেও সরকারের সমর্থন কমছে। রবিবার ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-এ প্রকাশিত জরিপ অনুসারে, মোট ৬৯ শতাংশ ভোটার সরকারকে তার প্রথম ১০০ দিনের কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক বলে উল্লেখ করেছেন।
ইসরায়েল সরকারের বিভিন্ন সূত্রের বরাতে হিব্রু মিডিয়াগুলো বলছে, সামনের সপ্তাহগুলোয় একটি বড় সামরিক অভিযান শুরু করতে বাধ্য হবে ইসরায়েল। এটি করে সরকার জনগণের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চাইবে। শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইসরায়েলের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসলেও পুরো বিপরীত পরিস্থিতির মুখে নেতানিয়াহু। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান