নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। ইশতেহারে তিনি সিলেট নগরের জলাবদ্ধতা দূর, বিকল্প বিদ্যুৎব্যবস্থা, রাজধানীর সঙ্গে দ্রুতগামী ট্রেন চালু এবং সুরমা নদীতে টানেল নির্মাণসহ ২১ দফা অঙ্গীকার দিয়েছেন।
শনিবার বেলা একটার দিকে সিলেট নগরের একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এতে তিনি সিলেটকে স্মার্ট, সবুজ ও পরিচ্ছন্ন নগর হিসেবে গড়ে তোলারও ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী (নাদেল), সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ।
এ সময় ইশতেহার পড়ে শোনান মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এতে তিনি বলেন, নগরের হকারদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেবেন। মহাপরিকল্পনা করে উন্নয়ন করবেন। স্মার্ট ও আধুনিক নগরে ডিজিটাল সেবার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসমৃদ্ধ মোবাইল অ্যাপ চালু করবেন। নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, বাসস্টেশন, রেলস্টেশনে বিনা মূল্যে ওয়াই–ফাইয়ের ব্যবস্থা করা হবে। সব ধরনের সেবা পর্যায়ক্রমে ডিজিটাল করবেন ও ই-সেবা চালুর উদ্যোগ নেবেন।
স্মার্ট নগর বিনির্মাণে মহাপরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, নগর ভবনকে পরিপূর্ণ ডিজিটাল করা হবে। মৌলিক নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় জনবল নিয়োগ করা হবে। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার খেসারত সিলেটবাসী দীর্ঘদিন ধরে দিয়ে যাচ্ছে। একটি গবেষণামূলক ‘স্যানিটেশন সলিউশন’ পরিকল্পনা প্রয়োজন। চা-বাগানের টিলা থেকে নেমে আসা মালনীছড়া, যোগিনীছড়া, গোয়ালীছড়া, কালীবাড়িছড়া, মঙ্গলীছড়া, হলদিছড়া, ভুবিছড়া, ধোপাছড়া ও গাভীয়ার খাল নামের ৯টি ছড়া নগর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিলিত হয়েছে সুরমা নদীতে। ছড়াগুলো উদ্ধার করে নদী পর্যন্ত পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা গেলে জলাবদ্ধতা দূর হবে।
পরিচ্ছন্ন নগর ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করার কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী বলেন, অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের মানোন্নয়ন। সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ, প্রজনন ও শিশুস্বাস্থ্য, পরিবারকল্যাণ, রোগ প্রতিষেধক ব্যবস্থাসহ পুষ্টি, পরিবেশ, বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা—এগুলো ঠিক রাখার জন্য নগরের বর্জ ব্যবস্থাপনা একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় বিভিন্ন স্থান বা জলাশয়ে ফেলা এসব বর্জ্য পরিবেশের জন্য যেমন হুমকি তৈরি করছে, তেমনি জমির উর্বরতাও কমছে। প্লাস্টিক বর্জ্যের ফলে সুরমা নদী, খাল–বিল নাব্যতা হারাচ্ছে।
গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু ও যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নগরের সড়কের পরিমাণ হওয়া উচিত মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ। সিলেটে জনসংখ্যার সঙ্গে যানবাহন বাড়লেও বাড়ছে না সড়ক। ফলে বাড়ছে যানজট। পরিকল্পনাহীন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা এবং চালক ও নাগরিকদের নিয়ম না মানার সংস্কৃতির জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পরিকল্পিত গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু ও যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিকল্প বিদ্যুৎব্যবস্থার জন্য সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন বা পৃথক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ও সঞ্চালন লাইনের ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে ইশতেহারে আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী বলেন, সুরমা নদী খনন উদ্যোগের ক্ষেত্রে যথাযথ তদারকি এবং দ্রুত শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী মুক্তি দেওয়ার দাবি রয়েছে—যা করা হবে। সিলেটের পুরোনো কারাগারকে উন্মুক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু উদ্যান’ তৈরি এবং সেখানে প্রাত ও সান্ধ্যকালীন ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করাসহ যুগোপযোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হবে। নগরে পুকুর ভরাট বন্ধ ও জলাশয় দূষণমুক্ত রাখার উদ্যোগ নিয়ে পানির আধার রক্ষায় সচেতনতা তৈরি করা হবে। প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও জমি দখল বন্ধ করে তাঁদের সিলেটে আসার পরিবেশ তৈরি করা হবে।
ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা সিলেটকে রক্ষা করতে ইমারত নির্মাণে বিধিমালা মানা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তাবেষ্টনীর ব্যবস্থা, নির্মাণকাজের তদারকি এবং আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায় দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি রোধে সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নগরের অভ্যন্তরে পর্যটকদের জন্য মিউজিয়াম স্থাপন এবং সুরমা নদীর তীরে বিনোদনকেন্দ্রে ব্যবস্থা করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং সুরমা নদীর তলদেশে টানেলের মাধ্যমে দক্ষিণ সুরমা ও উত্তর সুরমার যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। শহরে পর্যাপ্ত শৌচাগার তৈরি, পর্যাপ্তসংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ এবং নগরে ওয়ার্ডভিত্তিক খেলার মাঠ করে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উদ্যোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী বলেন, সিলেটের প্রচুর তরুণ আউটসোর্সিং করেন। এতে তাঁদের দক্ষ করে গড়ে তোলা ও সুযোগ–সুবিধা তৈরির ব্যবস্থা করা হবে। নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে প্রযুক্তিগত সেবা, প্রাথমিক তহবিল, পরামর্শ এবং বাজার সংযোগে সহায়তা করা হবে। প্রযুক্তির সিলেট গঠনে ‘আমার সিলেট’ নামে অ্যাপ তৈরির মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা হবে, যার মাধ্যমে মেয়রের সঙ্গে সাধারণ মানুষ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে পারবেন। এ ছাড়া পর্যটকদের জন্য আলাদা গাইড ম্যাপ করার পাশাপাশি নগরের দর্শনীয় স্থান ও এলাকাগুলোর আরও সৌন্দর্যবর্ধন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ভূমিদস্যু ও কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেয়র নির্বাচিত হলে তিন মাস পরপর বিভিন্ন পরিকল্পনা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে গণমাধ্যমের সামনে আসবেন বলেও ঘোষণা দেন তিনি।