জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিদেশে থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের আইনি লড়াই করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
তবে, বিদেশে থেকে তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমান আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন কি-না, সে বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত জানা যাবে আগামী বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল)। এ বিষয়ে ওই দিন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালত আদেশ দেবেন।
সোমবার (১০ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমান পলাতক থাকায় তাদের পক্ষের আইনজীবী নিয়োগ করে আইনি লড়াই করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে এ পর্যন্ত কোর্টে হাজির না হয়ে আইনি লড়াই করার কোনো নজির নেই। হাইকোর্ট তাদের জামিন শোনেননি।
বিদেশে থেকে তারেক-জোবায়দার আইনি লড়াই নিয়ে তিনি বলেন, ‘এর আগে করোনাকালীন সময়ে দেশের বাইরে থেকে দু’জন (দুই ভাই রণ হক শিকদার) আগাম জামিন আবেদন করেছিলেন। তখন আদালত কিন্তু সে দুজনের আবেদন খারিজই শুধু করেনি, তাদের জরিমানাও করেছিলেন। এছাড়া একজন আইনজীবী এরকম একটা (সারেন্ডার না করা) মামলা করেছিলেন, হাইকোর্ট কিন্তু একপর্যায়ে ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছিলেন।’ তাই পলাতক থেকে মামলা আইনি লড়াই করার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন রায়ে বিভিন্ন সময় এটা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে, পলাতক ব্যক্তির আইনে আশ্রয় লাভের কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে ওনারা যেহেতু পলাতক (তারেক- জোবায়দা)। ওনারা আদালতে আসেননি। তাই কোনোধরনের সাবমিশন রাখার সুযোগ পাবেন না এবং কোন আইনজীবী আসতে পারেন না।’
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলাটি করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তার মা অর্থাৎ তারেক রহমানের শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুকে অভিযুক্ত করা হয়। ২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
গত ২৯ মার্চ এই মামলায় পলাতক তারেক রহমান ও ডা. জোবায়দা রহমানের পক্ষে মামলার শুনানিতে অংশ নিতে আবেদন করেন তার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। দুজনের পক্ষে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, শুনানিতে অংশ নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন এ আইনজীবী।
তবে, দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘তাদের আইনের আশ্রয় নিতে কে নিষেধ করেছে? তিনি (তারেক রহমান) থাকবেন লন্ডনে রাজকীয় ভবনে, আর বলবেন তাকে আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত (অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক থাকলে) থাকার পরও তারা আইনজীবী নিয়োগের আবেদন আদালতের সময় নষ্ট ও আদালত অবমাননার সমান।’
দুদকের এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘এর আগে আপিল বিভাগ তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের আবেদন খারিজ করে বিচারিক আদালতে আশ্রয় লাভের নির্দেশ দেন। তারা তা করেননি। নতুন একটা আবেদন নিয়ে এসেছেন। তাই তাদের আবেদন খারিজ করে অভিযোগ শুনানি শুরু করার প্রার্থনা করেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
এর আগে ৯ এপ্রিল জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করা যাবে কি না- এ বিষয়ে আদেশের জন্য ১৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন আদালত। রোববার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান এদিন ধার্য করেন। আজ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন পলাতক তারেক-জোবায়দার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করতে শুনানি করেন তাদের আইনজীবী। অন্যদিকে দুদক এর বিরোধিতা করে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক আদেশের জন্য ১৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।
এ মামলায় ২০২২ সালের ১ নভেম্বর তারেক রহমান ও জোবায়দার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। বর্তমানে তারা পলাতক।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ঘোষিত আয়ের বাইরে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। এরপর ২০০৮ সালে এই তিনজনের বিরুদ্ধে দাখিল করা হয় অভিযোগপত্র।
এদিকে মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জোবায়দা। ওই বছরই এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। তবে এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে রায় দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই মামলায় আট সপ্তাহের মধ্যে জোবায়দাকে বিচারিক আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
উচ্চ আদালতের এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ওই বছরই লিভ টু আপিল করেন জোবায়দা। এরপর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ লিভ টু আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখেন।
সূত্র : জাগো নিউজ