দেশের অর্থনীতি, সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে আগামী নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হওয়া জরুরি বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের পাশাপাশি বড় দুই দলকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করা হলে বাইরের দেশগুলোর প্রভাব ফেলার বিষয়টি কমে আসবে। আর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশনকে সম্পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়ার পাশাপাশি কমিশন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করা পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
শনিবার (১৭ জুন) বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড আয়োজিত ‘নির্বাচনের পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন। বৈঠকের সঞ্চালনা করে এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু।
মানবাধিকার আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইনস্টিটিউটকে উন্নত করা প্রয়োজন। এই ইনস্টিটিউটকে উন্নত করতে না পারলে প্রতিবার নির্বাচন আসলেই সমস্যার সৃষ্টি হবে।‘
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, ‘এই মুহূর্তে যেভাবেই বিশ্লেষণ করি, বাংলাদেশ একটি জটিল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর এই জটিল সময় বলতে আমরা ভূ-রাজনীতির কথা বলি। এর মধ্যে গত দুই নির্বাচনে আমরা প্রমাণ করতে পারিনি যে, দেশের মানুষের কাছে, বহির্বিশ্বের কাছে নির্বাচনটা গ্রহণযোগ্য ও ভালো ছিল। তাই দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিকভাবে আগামী নির্বাচনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতি, সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নেও আগামী দ্বাদশ নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ।’
‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’—দেশের এই পররাষ্ট্রনীতি সাফল্যের সঙ্গে সরকার অনুসরণ করে আসছে উল্লেখ করে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘এর সুফলও বিভিন্নভাবে আমরা পেয়েছি। আমি মনে করি, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ভালো লেনদেনের মধ্যে আছে এবং আগামীতেও করতে পারবে। তবে কিছু কিছু চ্যালেঞ্জ তো আছেই। এবং এই মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি।’
সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান বলেন, ‘কেউ যখন সম্পূর্ণ হয়ে যায় তার দিকে দৃষ্টিটা পড়ে। তখন সে আরও দায়িত্বশীল হয়ে যায়। সুতরাং বাংলাদেশ আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাবে। সেদিক দিয়ে নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যপার এবং বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো আমাদের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে থাকার চাইতেও তাদের চাওয়া কীভাবে বাংলাদেশকে তাদের চিন্তা ভাবনায় নিয়ে আসা যায়। কিন্তু বাংলাদেশ তো নিজের গতিতে চলবে। নিজের চিন্তা ধারায় চলবে। এই যে দায়িত্বশীলতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘২০০৮ আওয়ামী লীগ যেই অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় শুরু করেছিল, ২০২৩ সালে সেটা কিন্তু আরও বড় হয়েছে। সুতরাং সবার দৃষ্টি বাংলাদেশের প্রতি। সেটা অর্থনীতির কারণে, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এবং তার যে বড় জনগোষ্ঠী আছে তাদের জন্য। কেননা আগামীতে বাংলাদেশ বিশ্বে বড় একটি কনজিউমার দেশ হবে। তাই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আগ্রহ বাংলাদেশের দিকে।’
বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পদক্ষেপগুলো অতি আলোচনায় না নিয়ে স্বাভাবিকভাবে নেওয়া উচিত বলে মনে করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বিশ্বটা এখন মাল্টিপুলার হয়ে গেছে। সেখানে আমার মনে হয় বাংলাদেশের পেশাদারিত্ব বাড়ানো দরকার। এখানে জনগণের দিকে তাকানো দরকার, অর্থনীতির দিকে তাকানো দরকার। এই দুটা বিষয় যদি মিলে যায়, তাহলে বোঝা যাবে আগামীতে কী ধরনের নির্বাচন হবে এবং জনগণ এটা মেনে নেবে কিনা।’
গোল টেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রমুখ।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।