‘সাজানো’ ধর্ষণ মামলায় সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ব্যবসায়ী ও সদর ইউনিয়নের একাভিম গহরপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মাহবুব আলম জনিকে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।
পূর্বশত্রুতার জেরে কোনোধরনের তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই পরিকল্পিতভাবে এ নাটক সাজানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন মাহবুব আলমের স্ত্রী রফনা বেগম।
বুধবার (১২ এপ্রিল) সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। মেডিকেল প্রতিবেদনে এর প্রমাণ না পাওয়া, ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহে পুলিশের অনীহা এবং মোবাইল কললিস্টে যোগাযোগের প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও জনিকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ তার।
রফনা বেগম বলেন, ‘দুই সন্তানের জনক আমার স্বামী মাহবুব আলম জনি ষড়যন্ত্রের শিকার। মিথ্যা, কাল্পনিক, ভিত্তিহীন ও সাজানো মামলায় একমাস ধরে তিনি কারান্তরীণ। একই গ্রামের বাসিন্দা, বর্তমানে ২৪/৯ উদ্দীপন চন্দনীটুলা, মিরাবাজারে বসবাসকারী আশরাফ উজ জামান আইজাক পূর্ব শত্রুতার কারণে জনৈক নারীকে ভাড়া করে এই মিথ্যা ধর্ষণ মামলা সাজিয়েছেন। যার পক্ষে যথার্থ প্রমাণ রয়েছে।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘গত ১২ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সাদা পোশাকে একদল পুলিশ জনিকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ধরে নিয়ে যায়। এ খবর শুনে বিশ্বনাথ থানায় গিয়ে জনির সন্ধান পাইনি। পরে সিলেট মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানায় তার সন্ধান পাই।’
মামলার বিভিন্ন ত্রুটি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মামলার এজহার অনুযায়ী দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার থানার গহরপুর গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের মেয়ে জেবা বেগম ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। অথচ, মোগলাবাজারের অধীনে গহরপুর কোনো গ্রাম নেই; গ্রামটি বালাগঞ্জে। সে গ্রামেও এই নামে কোনো নারীর অস্তিত্ব নেই।’
সম্পূর্ণ ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে টাকার বিনিময়ে এ মামলা দায়েরের অভিযোগ করেন দুই সন্তানের এই জননী। জেবা বেগম নামে কাউকে তার স্বামী চিনেন না বা কখনও দেখেননি বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘কথিত নারী মামলায় উল্লেখ করেছেন আমার স্বামীর সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। ১ মার্চ জিন্দবাজারে দেখা এবং লন্ডনীরোডে আমার স্বামীর খালার বাসায় (অগ্রণী ৩৭ নম্বর বাসায়) নিয়ে ধর্ষণ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে ওই বাসা কিংবা ওই এলাকায় আমার স্বামীর কোনো খালা বসবাস করেন না। গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের মো. মাহবুব আলম জনির মোবাইল নম্বরের কল লিস্ট সংগ্রহ করে মামলায় উল্লেখিত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের প্রমাণও মিলেনি। নারীর মেডিকেল রিপোর্টেও ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।’
পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা ও পক্ষপাতের অভিযোগ এনে রফনা বেগম বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রমাণাদি আমরা সংগ্রহ করে দিতে চাইলেও তদন্ত কর্মকর্তা বিদ্যুৎ দে তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। ঘটনার স্থানে সিসি টিভি থাকলেও সেই চিত্র সংগ্রহ করতে তার আগ্রহ নেই। এমনকি আমাদের সাথে কথা বলতেও নারাজ তদন্ত কর্মকর্তা। বিশ্বনাথ থানা পুলিশ মাহবুব আলমকে সহজ-সরল ও ভালো মানুষ বলে প্রতিবেদন দিলেও স্থানীয় আইজাক কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই তাকে গ্রেপ্তার করেন এসআই বিদ্যুৎ দে।’
রফনা বেগম অভিযোগ করেন, গ্রামের মৃত সিদ্দিক আলীর পুত্র মো. আশরাফ উজ জামান আইজাক, তার ভাই অ্যাপল ও পাপ্পু পুলিশকে দিয়ে তার স্বামীকে হয়রানি করছেন। এই আইজাক বাদী হয়ে জনির বিরুদ্ধে দুটি মিথা মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দুটির সত্যতা না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিযেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘আমার মামা শশুর যুক্তরাজ্য প্রবাসী জুয়েল আহমদ গংদের সম্পত্তি আমার স্বামী দেখাশুনা করেন। আইজাক জুয়েল আহমদ গংদের নিকটাত্মীয়। সম্পত্তি নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছে। তাই, প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে এসব মামলা দিয়ে হয়রানি করছে তারা।’
নিজের স্বামীকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ও ষড়যন্ত্রের শিকার দাবি করে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত মাহবুবুল আলম জনিকে নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে রফনা বেগম প্রশাসনের উর্ধ্বতন মহলের কাছে বিনীত অনুরোধ জানান।