প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ ভারত সফরকালে নির্বাচন নিয়ে মোটামুটিভাবে সব আলোচনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
শুক্রবার দুই দিনের সফরে সিলেটে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিমানবন্দর থেকে নেমে সরাসরি চলে যান হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে। সেখানে ৩৪ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। পরে মাজার মসজিদেই জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আব্দুল মোমেন বলেন, বিদেশিদের কথা চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। বিদেশিরা খামাখা বাংলাদেশকে ত্যক্ত করে। তবে ভালো উপদেশ দিলে তা গ্রহণ করা হবে। অন্যথা বাংলাদেশের ওপর খড়্গ নামলে, বাংলাদেশ বিজয়ী জাতি তা প্রতিহত করার সামর্থ্য আছে।
এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকান সরকার বাস্তবতার মতবাদে বিশ্বাসী। সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হয়ে গেলে আমেরিকাও সমর্থন দেবে।
২মন্ত্রী বিএনপিকে জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জনসমর্থন প্রমাণের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, দেশে নির্বাচনের জোয়ার বইছে। সব শ্রেণি-পেশার লোক ভোট দেওয়ার জন্য এক্কেবারে দাঁড়িয়ে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব যাকে ইচ্ছা তাকে দেব, এ কথায় আমরা বিশ্বাস করি। দেশে একটি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন হবে।’
এ সময় তিনি সব পেশার মানুষকে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তে ভোট দিয়ে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার গত ১৫ বছর ভালো কাজ করেছে। এ সরকার মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর।
তিনি দেশবাসীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এবার আমাদের পরীক্ষা, আমরা আশা করি আপনারা আমাদের এ পরীক্ষায় পাশ করাবেন।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালেও আমাদের সঙ্গে অনেকেই ছিলেন না; কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি তাদের সহায়তা আমাদের প্রয়োজন নেই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকা খুব বাস্তববাদী সরকার। তারা বাস্তবতার মতবাদে বিশ্বাস করে। তারা কিছু ঘটে গেলে পরে সমর্থন দেয়।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমেরিকা আমাদের সঙ্গে ছিল না; কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পর জাতিসংঘে সদস্যপদের জন্য যখন বাংলাদেশ প্রস্তাবনা পাঠায় সেই প্রস্তাবনায় ১৫ বার তারা সমর্থন দিয়েছে। চায়নাসহ অনেক দেশ এ প্রস্তাবের বিপক্ষে ছিল, কিন্তু আমেরিকা দেখেছে সত্যি সত্যি বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে, সুন্দর সরকার গঠন হয়েছে। এ বাস্তবতাকে তারা স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছে। এবারো তাই হবে। তারা আমাদের সাপোর্ট দেবে, আমরা তাই আশা করছি।’
নির্বাচনের ঠিক আগে ভারতে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা এমন কিছু না; রুটিন ওয়ার্ক। আর নির্বাচন নিয়ে যে আলোচনা ইতোমধ্যে আপনারা জানেন ভারতের অবস্থান। প্রধানমন্ত্রী সবশেষ ভারত সফরকালে নির্বাচন নিয়ে মোটামুটিভাবে সব আলোচনা হয়েছে। এবারে বৈঠক হচ্ছে, একটি সাধারণ বৈঠক। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে অনেক ধরনের সমস্যা থাকে। সেই ছোটখাটো সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা হবে, মূলত এটা গুরুত্বপূর্ণ কোনো সভা নয়। তবে সেখানে প্রায় ৮০ জনের মতো রাষ্ট্রদূত আছে, যাদের ঢাকায় মিশন নেই। তো আমরা যখনই সেখানে যাই তখন তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয়। আলোচনা হয় খাওয়া-দাওয়া হয়। এবারো তাদের দাওয়াত দেবেন পররাষ্ট্র সচিব। তবে প্রয়োজন হলে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা এসব দেশের রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করা হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জেনে খুশি হবেন যে অনেক দল নির্বাচনমুখী হয়েছে, যারা আগে নির্বাচনে আসার বিরুদ্ধে ছিল। এটা ভালো খবর। আমরা চাই সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপিকেও বলব আপনারা যদি জনগণের মঙ্গল করতে চান, তবে এ জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করুন। এসব করে দেশের নেতৃত্বে যাওয়া যায় না। এসব কর্মকাণ্ড বাদ দিয়ে, জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে, খত দিয়ে নির্বাচনে আসেন। জাতিকে বলেন আমরা ভুল করেছি। আপনাদের স্বাগত জানাব। সুষ্ঠু সুন্দর একটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দেশে আপনাদের কোনো ধরনের জনপ্রিয়তা আছে কিনা তা প্রমাণ করুন।’