G-X8PRCEGCWT

স্বপ্ন পূরণের পথে বিশ্বনাথবাসী হচ্ছে ওয়ান পাউন্ড হাসপাতাল

একাত্তর ডেস্ক
প্রকাশিত এপ্রিল ৫, ২০২৩
স্বপ্ন পূরণের পথে বিশ্বনাথবাসী হচ্ছে ওয়ান পাউন্ড হাসপাতাল

মীম সালমান
টাকা-পয়সা কোনো কিছুরই অভাব নেই প্রবাসী অধ্যুসিত বিশ্বনাথবাসীর। অভাব ছিল শুধু উন্নত চিকিৎসা সেবার। উপজেলাটির অবস্থান সিলেট শহর থেকে অনেকটা দূরে হওয়াতে রাত ১০টার পর এই অভাবটা আরো প্রকট রূপ ধারণ করতো। অনেক মুমূর্ষ রোগীই এই সময়টাতে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু বরণ করেছেন। দিনের বেলা কিংবা সাধারণ রোগীদের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স একমাত্র ভরসা হলেও ইমার্জেন্সী রোগীদের প্রেরণ করা হতো সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে। এতেকরে গাড়ি সংগ্রহে যেমন রোগীর স্বজনদের দুর্ভোগ পোহাতে হতো, তেমনি অসহনীয় যন্ত্রণায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হতো রোগীদের। অনেক সময় দেখা যেতো গাড়ির ব্যবস্থা হয়েছে, কিন্তু দূরের পথ অতিক্রম করে চিকিসাকেন্দ্রে পৌছানোর আগেই রোগীকে হারাতে হয়েছে স্বজনদের। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের পন্থা খুঁজছিলেন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিশ্বনাথ প্রবাসীরা।
অবশেষে সেই উদ্যোগের সফল সূচনা হয়েছে গত ০১ এপ্রিল শুক্রবার সকালে। এরআগে ২০১৫ সালের জুন মাসে যুক্তরাজ্যে এ সংস্থার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর ২০১৭ সালের মার্চ মাসে বিশ্বনাথে ‘ফ্রি ফ্রাইডে ক্লিনিক’র মাধ্যমে হাসপতাল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে সকল কাজ সম্পন্ন করে গত ০১ এপ্রিল শুক্রবার সকালে হাসপাতালের ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে মাটি ভরাট কাজ শুরু হয়েছে। মাটি ভরাট কাজ শুরু উপলক্ষে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে দোয়া পরিচালনা করেন মাদানিয়া মহিলা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা কামরুল ইসলাম ছমির। মূলত, মাটি ভরাট কাজ শুরুর মাধ্যমেই স্বপ্ন সফলে আরেকধাপ এগিয়ে গেলো ওয়ান পাউন্ড হাসপাতাল।
জানা যায়, বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়নের বাইপাস রোড সংলগ্ন ৫ বিঘা জমির উপর এ হাসপাতালটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে গরীব ও অসহায় মানুষেরা বিনামূল্যে চিকিৎসা করানোর সুবর্ণ সুযোগ তৈরি পাবেন। রাতের চিকিৎসাসেবা নিয়ে আর ভোগান্তি পোহাতে কোনো রোগী বা স্বজনকে। ২৪ ঘণ্টা নিরবিচ্ছিন্ন ও উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্রত নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ওয়ান পাউন্ড হাসপাতালের নির্মাণ কাজ। এখানকার সেবা শুধু বিশ্বনাথবাসীই নয়, সিলেটের ১কোটি মানুষও চাইলে এর দ্বারা উপকৃত হতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের সিও ডা. শাহনুর আলী বলেন, প্রবাসী অধ্যুষিত উপজেলা হওয়ার পরও এখানে রাত ১০টার পর কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসক পাওয়া যায় না। মানুষকে চিকিৎসা নিতে ছুটে যেতে হয় সিলেটে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়ায় অনেকেরই মৃত্যু হয়। এখানে ওয়ান পাউন্ড হসপিটালের কার্যক্রম শুরু হলে রাত ১০টার কেউ আর সিলেট শহরে যেতে হবে না, সহজে বাড়ির পাশে সেবা পাবেন। তাই এই মহতী কাজে দেশ ও প্রবাসের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে উপকৃত হবে বিশ্বনাথ তথা সিলেটের মানুষজন।
হাসপাতালের সেক্রেটারি জেনারেল লন্ডন টাওয়ার হ্যামলেটের সাবেক স্পিকার, সাবেক ডেপুটি স্পিকার কাউন্সিলর আলহাজ্ব মোহাম্মদ আয়াছ মিয়া বলেন, ‘ওয়ান পাউন্ড জেনারেল হসপিটাল’ নির্মাণ করা হলে বিশ্বনাথের ২লক্ষাধিক জনসাধারণসহ বৃহত্তর সিলেটের ১কোটি জনসাধারণ উপকৃত হবে। এছাড়া হাসপাতালে অন্যান্য চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি গর্ভকালীণ মাতৃসেবা ও এলার্জি সংক্রান্ত রোগের জন্য বিশ্বমানের অত্যাধুনিক সম্পুর্ন আলাদা দু’টি ইউনিট অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করা হবে।
গরীব ও অসহায় রোগীদের চিকিৎসা সেবায় বিনামূল্যে সেবা দেওয়া হবে। মধ্যবিত্ত্বদের হাফ মূল্যে উচ্চবিত্তদের নির্ধারিত মূল্যে সেবা প্রদান করা হবে। এটা শুধু বিশ্বনাথবাসীর জন্য নয় সিলেটসহ পুরো বাংলাদেশের গরীব মানুষরা এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
এদিকে, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাজ্য বসবাসরত প্রবাসীরা নিজেদেরকে ফাউন্ডার্স মেম্বার হিসেবে সম্পৃক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার একাধিক বৈঠকে প্রায় অনেকে খুশিমনে ১ হাজার পাউন্ড প্রদান করে ফাউন্ডার মেম্বার হিসেবে নিজেদের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় সম্পৃক্ত করেছেন। তন্মধ্যে অনেকে নিজে একজন ফাউন্ডার মেম্বার হওয়ার সাথে সাথে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের অনুপ্রাণিত করে আরও অন্তত দশজন করে ফাউন্ডার মেম্বার করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন।
পাশাপাশি প্রবাসীরা বলেন, নিঃসন্দেহে এটা এক মহতি উদ্যোগ এবং ছদকায়ে জারিয়ার নিয়তে মুক্ত হস্তে দান খয়রাত প্রদানের এক যথাযথ প্লাটফরম। আমরা আনন্দিত ইতিমধ্যে অনেকেই ফাউন্ডার মেম্বার হিসাবে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। সকলের প্রতি আমাদের ভালোবাসা। বিশ্বনাথের জনকল্যাণে আমাদের দলমত নির্বিশেষে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসা একান্ত কাম্য।
হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় জনসাধারণের মাঝে আনন্দের ঢেউ; এ প্রসঙ্গে জনসাধারণের বক্তব্য হলো, আমাদের বিশ্বনাথের সুনাম আজ বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিশ্ব দরবারে অনন্য ভুমিকা রাখছে বিশ্বনাথের সন্তানরা। সে অনুযায়ী বিশ্বনাথের অবহেলিত মানুষের সার্বিক কল্যাণে এমন একটি হাসপাতাল আরো অনেক আগেই প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু দেরিতে হলেও আমাদের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে এটি সত্যিই আনন্দের বিষয়। হসপিটাল নির্মাণে বিশ্বনাথকে বেছে নেওয়ায় সকল প্রবাসীদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁরা বলেন, বিশ্বনাথে ‘ওয়ান পাউন্ড হসপিটাল’ নির্মাণের ফলে এ অঞ্চলের অবহেলিত জনগোষ্ঠী যেমন উন্নত স্বাস্থ্য সেবা পাবে, তেমনি বিশ^নাথের স্বাস্থ্যসেবা আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

শেয়ার করুন