সরকারি কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ ও ‘ভাই’ ডাকা প্রসঙ্গ নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উত্তাল, ঠিক তখনই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটালেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসের উপ সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসার হাসিবুল হাসান-কে ভাই সম্বোধন করায় সাংবাদিক ফাহিমের উপর তিনি ক্ষিপ্ত হন। এসময় ফাহিমের সাথে থাকা আরও দুই সাংবাদিকের সাথেও তিনি অসদাচরণ করেন।
মিজানুর রহমানের এমন ধৃষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তাদের দাবি, ‘ভাই’ ডাকা নিয়ে মিজান যে আচরণ করেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল প্রদর্শন করেছেন। কারণ, এরআগে ‘স্যার না বলায়’ রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ক্ষুব্ধ আচরণ নিয়ে গত শনিবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সরকারি কর্মচারীরা জনগণের সেবক। তাঁদের স্যার বা ম্যাডাম ডাকার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ভদ্রতার খাতিরে অনেকে স্যার বা ম্যাডাম ডাকেন। কিন্তু এটি ডাকা বাধ্যতামূলক কিছু নয়। কেউ যদি আপা বা ভাই ডাকেন, তাতে দোষের কিছু নেই। এতে মাইন্ড করারও কিছুই নেই। সরকারি চাকরিজীবীরা জনগণের সেবক—এই চিন্তা থেকেই কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের কথা মনে করিয়ে দেন। যেখানে বলা হয়েছে ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হবে।
অথচ, এমন প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরও মিজান একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন। যা প্রতিমন্ত্রীকে উপেক্ষিত করার সামিল ও গুরুতর অপরাধ।
জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে গোলাপগঞ্জ অনলাইন প্রেসক্লাবে সদস্য ফাহিম আহমদ একটি কাজে মৎস্য অফিসে যান। এসময় মৎস্য অফিসার হাসিবুর রহমানকে না পেয়ে উপ সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের শরনাপন্ন হন ফাহিম। তখন কী চাই? মিজানুর রহমানের এমন প্রশ্নের জবাবে ভাই (মৎস্য অফিসার হাসিবুল হাসান) কোথায় আছেন? জানতে চান ফাহিম। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ফাহিমসহ সতীর্থদের সাথে অসদাচরণ করেন মিজান। তিনি বলেন, একজন বিসিএস ক্যাডারকে কিভাবে ডাকতে হয় আপনি জানেন না?
এসময় সাংবাদিক ফাহিম আহমদের সাথে থাকা এটিএন বাংলা ইউকের গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি আব্দুল আজিজ ও দৈনিক ভোরের কাগজের গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি জাহিদ উদ্দিনও সমস্বরে কী ডাকতে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফিশারী অফিসার ডাকবেন। এরপর মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন।
এ বিষয়ে উপ সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মৎস্য কর্মকর্তা একজন বিসিএস কর্মকর্তা। তাকে ভাই ডাকা কেমন দেখায়, শালীনতার মধ্যে পড়েনা। ভাই ডাকা কি অশালীন বা বিসিএস ক্যাডার কোন অফিসারকে কি ভাই ডাকা নিষেধ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
এ ব্যাপারে সাংবাদিক ফাহিম আহমদ জানান, মৎস্য অফিসে গিয়ে মৎস্য কর্মকর্তাকে না দেখে উপ সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে বলি, ভাই কোথায়? এ কথা বলতেই তিনি ক্ষেপে যান। বলেন, ভাই কেন বলছেন। বিষয়টির পর সাথে থাকা আরো দুজন সহকর্মী সাংবাদিকও এর প্রতিবাদ জানান। উনারা আমাদের সাথে যদি এমন আচরণ করেন তাহলে সাধারণ জনগণের সাথে কি ধরনের আচরণ করছেন তা জানা নেই।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী মান্নানের মুঠোফোনে এই প্রতিবেদক সহ সাংবাদিকরা একাধিক কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
এরআগে ‘স্যার না বলায়’ রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ক্ষুব্ধ আচরণ করেছে- এমন অভিযোগ তুলেছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। এ ঘটনার প্রতিবাদে তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও শুরু করেছিলেন। অবশ্য ডিসি চিত্রলেখা নাজনীন সেদিন দুঃখ প্রকাশ করে ওই ঘটনার ইতি টানলেও ফেসবুকে সরকারি চাকরিজীবীদের ‘স্যার’ ডাকা না–ডাকা নিয়ে এখনো চলছে তুমুল আলোচনা।
বহুল আলোচিত এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আইনগতভাবে আমরা সবাই কর্মচারী। আমাদের সংবিধানে কর্মকর্তা বলে কোনো শব্দ নেই। আমরা একটু খুশি হওয়ার জন্য কর্মকর্তা বলি। তবে দেশের জনগণই আমাদের সবকিছু, আমাদের কর্তা। তাদেরকে সম্মান করতে হবে। তাদের সেবা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জনগণ এই দেশের মালিক। তাই সরকারি কর্মচারীরা অযথা জনগণের সম্পদ নষ্ট করতে পারবেন না। তাদের প্রধান কাজই জনগণের সেবা করা।
শনিবার (২৫ মার্চ) সকাল ১১টায় সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শহীদ তালেব ও কৃপেন্দ্র দাসের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ পরবর্তী আলোচনা সভায় উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।