* ব্রিজ-কালভার্ট পুনঃসংস্কার না করেই ধলাই সেতু-দয়ারবাজার অচল রাস্তা সচলকরণ চলছে * বৃষ্টির পানিতেই নিমজ্জিত হবে বৃহত্তর কলাবাড়ী গ্রাম * দ্রুত সংস্কার দাবি এলাকাবাসীর
মো. মঈন উদ্দিন মিলন, কোম্পানীগঞ্জ
একযুগেরও বেশিসময় ধরে অচল হয়ে পড়া কোম্পানীগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ ধলাই সেতু-দয়ার বাজার-ভাটরাই রাস্তার সচল করণের কাজ চলছে। কাজের অগ্রগতি দেখে মনে হচ্ছে নির্ধারিত দ্বিতীয় মেয়াদের আগেই কাজটি সম্পন্ন করবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এদিকে জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি সচল হওয়াটা স্থানীয় জনতার কাছে স্বপ্ন যাত্রার মতো মনে হলেও অজানা উদ্বেগ-আতঙ্কে দিন পার করছেন তারা। মুখে আনন্দ হাসির বদলে কপালে চিন্তার রেখা নিয়ে চেয়ে আছেন স্থানীয় সাংসদ ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শামসুল ইসলাম-এর দিকে। মূলত, এই দুজনই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে স্থানীয়দের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে পরিত্যক্ত প্রায় রাস্তাটি সচল করেছেন। তবে তারা নিশ্চই চাইবেন না যে, সংস্কারকৃত রাস্তার দ্বারা আবারও কোনো এলাকার মানুষ ভোগান্তিতে পড়ুক। এমনটি দাবি করেন স্থানীয় সচেতন মহল।
জানা যায়, একযুগেরও বেশিসময় ধরে অচল ছিল ধলাই সেতু-দয়ার বাজার-ভাটরাই রাস্তাটি। যার ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ-ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এর ব্যবহারকারী স্থানীয়দের। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও যখন সরকারের পক্ষ থেকে রাস্তাটি সংস্কারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি, তখন আন্দোলনে নামেন স্থানীয়রা। দফায় দফায় বিভিন্ন সংগঠনসহ স্থানীয় জনতার উদ্যোগে মানববন্ধনসহ ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হলে তা স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। অবশেষে জনতার দাবিকে গুরুত্বের সাথে আমলে নেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ ও কোম্পানীগঞ্জের কৃতিসন্তান সরকারের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শামসুল ইসলাম। পরবর্তীতে উভয়ের প্রাণান্ত চেষ্টায় টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে রাস্তাটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। যার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা। টেন্ডার আহবানে কিশোরগঞ্জের মেসার্স মমিনুল হক ও মেসার্স রহমান (জেভি) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের দায়িত্ব পেয়ে সহকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডি এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী অকিল চন্দ্র বিশ্বাসের তত্বাবধানে সম্প্রতি দ্রুত গতিতে রাস্তাটির প্রাথমিক কাজ শেষে এখন চূড়ান্ত আরসিসি ঢালাই চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট মাঠ পর্যায়ের সহকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে জানা যায়, প্রায় ১ বছরের কাছাকাছি সময় বেঁধে দেয়া হলেও স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার দীর্ঘমেয়াদি ধকল কাটাতে নির্দিষ্ট দ্বিতীয় মেয়াদের পূর্বেই রাস্তার কাজ সম্পন্ন হবে।
সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, মূল রাস্তার গার্ডওয়াল ও বালিভরাট ফিটিং রোলিং শেষ করে দ্রুতগতিতে ঢালাই কাজ করছেন শ্রমিকরা। আনুমানিক ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন।
কিন্তু যুগযুগ ধরে পড়ে থাকা ধলাই সেতু হতে কলাবাড়ী, কালীবাড়ী, দয়ারবাজার পর্যন্ত রাস্তার ছোট ব্রিজ দুটিসহ মোট ৭টি কালভার্ট সংস্কারে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বর্ষা মৌসুমে বৃহত্তর এলাকার পানি নিষ্কাশনে উল্লেখিত ব্রিজ-কালভার্টগুলো কয়েক যুগ ধরেই ব্যবহার হয়ে আসছে। সময়ের পরিক্রমায় এগুলো এখন পরিত্যক্ত প্রায়। কারণ, ব্রিজ-কালভার্টের পানির লেয়ার ও রাস্তার লেয়ার প্রায়ই সমান। বর্ষা মৌসুমে পানির গতি পথ বাধার মুখে পড়ে ব্রিজ-কালভার্টের নিচের দিকে প্রবাহিত না হয়ে রাস্তা ও বসত বাড়ির উপর দিয়েই প্রবাহিত হয়। অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে পানিবন্দী হয়ে পড়েন কলাবাড়ী, কালীবাড়ি এলাকার জনসাধারণ। এতে সাধারণ জনগণ, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ সর্বসাধারণের চলাচলের চরম ব্যাঘাত ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি রাস্তার উন্নয়ন জনিত কাজের ফলে আগের তুলনায় আরও কিছুটা উঁচু হয়েছে। এমতাবস্থায় ব্রিজ-কালভার্টগুলো দ্রুত সংস্কার না হলে কলাবাড়ী ও কালীবাড়ী গ্রামের বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়ে পড়বেন। বিশেষ করে বৃহত্তর কলাবাড়ী গ্রামের মানুষ খুব বেশিই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ, এখানকার পানিবন্দীতা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে।
গ্রামের যুবসমাজের মধ্যে লুৎফুর, তাজ উদ্দিন, মোহাম্মদ, জালাল আহমদ, সেলাল, রোমান প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, এমনিতেই কিছু এলাকা দীর্ঘদিন পানিমগ্ন হয়ে থাকে। শুকনো মৌসুমেও সেসব স্থানে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। এখন রাস্তা উঁচু হয়েছে। সেক্ষেত্রে পানিবন্দী হয়ে পড়ার আশঙ্কাটা আরো প্রকট হয়েছে। তারা এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম চেরাগ আলী বলেন, ৪নং ওয়ার্ডে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র কলাবাড়ী গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া বানিরামের খালের উপর ঠান্ডা স্যারের বাড়ী সংলগ্ন একটি ব্রিজসহ আরো কয়েকটি কালভার্ট রয়েছে। যা সচল না করলে বর্ষা মৌসুমে পুরো এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকবে। তিনি বিষয়টি তদন্তপূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা আসিফ খানের নিকট জনগুরুত্বপূর্ণ ধলাই সেতু দয়ার বাজার রাস্তার পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাদত চলমান রাস্তার কাজের সাথে পানি নিষ্কাশনের আলাদা কোন ব্যবস্থ নেই। তবে কাজের শেষে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে সার্বিক ব্যবস্থা উত্তরণের জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণকরণে ভূমিকা রাখবেন বলে জানান তিনি।