এসএসএফের ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কখনোই বাইরের কোনও হস্তক্ষেপের কাছে মাথা নত করবে না। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তার অফিসে আয়োজিত বিশেষ দরবার (সমাবেশ) অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন জাতি। আমরা যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের দেশ অর্জন করেছি। আমরা কারও হস্তক্ষেপের কাছে মাথা নত করব না। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত।’
বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ নীতি অনুসরণ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার গুরুত্বপূর্ণদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে কাজ করছে। দেশের উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন তা করছে। তিনি বলেন, অনেক বাধা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ বারবার প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হয়েছে, কিন্তু সফলতার সঙ্গে সেগুলো কাটিয়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখনও অনেক বাধা এবং ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। কারণ একটি দেশ যখন দ্রুত অগ্রগতি করে, তখন অনেকেই তা সহ্য করতে পারে না। তারা বিভিন্ন ঝামেলা শুরু করে।’
একটি স্বাধীন ও বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বমঞ্চে মাথা উঁচু করে দেশের সব মানুষকে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা নিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো (বাধা-বিপত্তি) নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।’
এসময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এসএসএফ মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান তার স্বাগত বক্তব্যে বাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে এসএসএফ এবং এর কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান সংকলিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭৫টি বাণী সংবলিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর উক্তি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
১৯৮৬ সালের ১৫ জুন রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা বাহিনী (পিএসএফ) গঠিত হয়, যা পরবর্তীতে দেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের পর ১৯৯১ সালে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (এসএসএফ) নামে নামকরণ করা হয়। রাষ্ট্রপতি যেখানেই থাকুন না কেন এবং ভিআইপি, রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান বা সরকার কর্তৃক ভিআইপি হিসেবে ঘোষিত যেকোনও ব্যক্তিকে ‘শারীরিক নিরাপত্তা’ দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই বাহিনী গঠন করা হয়। সংসদীয় ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের পর এটির প্রাথমিক কাজ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অন্য ভিআইপিদের সুরক্ষা দেওয়া।
আধুনিক প্রযুক্তির কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর অপব্যবহার রোধে সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি আমাদের উন্নয়নের পথ খুলে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের এ ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে যাতে এই প্রযুক্তি দেশের মানুষের ক্ষতি করতে না পারে।’
প্রযুক্তি অনেক আশঙ্কা তৈরি করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ধরনেও পরিবর্তন হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য এসএসএফ সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের সঠিক নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা, পেশাদারিত্ব এবং আন্তরিকতার মাধ্যমে এসএসএফ দিনে দিনে উন্নতি করতে থাকবে।’ এসএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবসে শেখ হাসিনা বাহিনীর শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও পেশাদারিত্বের দিক থেকে একটি আদর্শ নিরাপত্তা বাহিনীতে পরিণত হবে বলে আশা করেন। সূত্র: বাসস।