ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে সফলভাবে কাজ করে নিজের লক্ষ্যকে অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া একজন ফাহিম আহমেদ চৌধুরী। ছোটবেলা থেকেই তথ্য-প্রযুক্তির প্রতি ঝোঁক ছিল ফাহিমের। ডিজিটাল ওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কাজ করতে করতেই তার বেড়ে ওঠা। ২০১৬ সালে প্রথম নিজের কলেজ নটরডেমেই প্রি-অর্ডার নিয়ে বিক্রয় করেছিলেন লেটারম্যান জ্যাকেট। সেখান থেকে অন্যান্য স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যাকেট তৈরি করে ব্যবসায় হাতেখড়ি তার। এরপরই মার্কেটিংকে নিজের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে তৈরি করেন।
২০১৮ সালে স্নাতক শেষ করে নিজেই তৈরি করেন একটি স্টার্টআপ, যার নাম ছিল ওলিক। সেই স্টার্টআপ থেকে বুটক্যাম্প করে জিতেছিলেন ১০ লাখ টাকার প্রাইজ মানি। কিন্তু এরপরই ঝড় আসে ফাহিমের জীবনে। ১০ লাখ টাকা প্রাইজমানি নিয়েও ব্যর্থ হয় তার স্টার্টআপ। এরপর আরও ৩ জন অংশীদার নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ফিস অ্যান্ড ফ্রাই’স নামের রেস্তোরাঁ। যেখানে বিনিয়োগ করেছিলেন এতদিনের সব জমানো অর্থ। প্রথম তিনমাস খুব ভালোভাবে চললেও করোনার ধাক্কায় রেস্তোরাঁটি বন্ধ করতে বাধ্য হন।
এতকিছুর পরেও নিজের লক্ষ্যকে আগলে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছেন ফাহিম। দ্বিতীয়বার ব্যর্থ হওয়ার পর স্টার্টআপ ছেড়ে যখন নিজের লক্ষ্যে ফিরে আসেন, এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ফাহিমকে। শুরুতে কন্টেন্ট রাইটিং নিয়ে কাজ করেন। অল্প টাকায় কাজ শুরু করে নিজের কাজের দর বাড়িয়েছেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। একটা সময়ে নিজেই বাল্ক আকারে কন্টেন্ট রাইটিংয়ের কাজ বিদেশ থেকে এনে দেশের মানুষদের দিয়ে করিয়েছেন। এসইও বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাতিও পেয়েছেন।
সবশেষ শুরু করেন অ্যাড রান বা মিডিয়া বায়িংয়ের কাজ। শুরুতে ১০ হাজার টাকার অ্যাড রান করতেন। ধীরে ধীরে বিভিন্ন কোম্পানি, রেস্তোরাঁর মিডিয়া বায়িংয়ের কাজ পেতে থাকেন ফাহিম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২-৩ কোটি টাকায়।বর্তমানে তিনি এসইও পরিষেবা দেয় এমন দুটি সংস্থার মালিক।
ফাহিম ২০১৯ সালে গ্রামীণফোন প্রি-অ্যাক্সিলারেটর প্রোগ্রামের একজন ফেলো গ্র্যাজুয়েট। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের প্রথম অগমেন্টেড রিয়েলিটি বুকলেট উপস্থাপন ও চালু করেন যা ২০১৯ সালের ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপোতে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উদ্বোধন করেন। পরবর্তী বছরে তিনি জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত ওয়ান ইয়াং ওয়ার্ল্ড সামিটে বাংলাদেশের প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্রদূত হন।
নিজের সাফল্যের মূলমন্ত্র কি ছিল, সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে ফাহিম এক শব্দে বলেছেন ‘ব্যর্থতা’। বার বার ব্যর্থ হওয়ার ফলে নিজের স্কিল আরও ডেভেলপ করতে পেরেছেন তিনি। ফাহিম মনে করেন, ২০৩০ সালের মধ্যে অধিকাংশ ব্যবসায় একাডেমিক গ্রেডের পরিবর্তে দক্ষতার ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করবে। তাই ফ্রিল্যান্সিং সময়ের সঙ্গে আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। ফলে ডিজিটাল মার্কেটিং ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে কাজ করবে বলেই বিশ্বাস করেন ফাহিম।
নতুনদের জন্য ফাহিমের পরামর্শ হচ্ছে, যে কোনো একটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। বর্তমান বাজারে একটি সমস্যা হলো কাজ করার জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞতা এবং অভিজ্ঞতার জন্য প্রয়োজন কাজ। তাই কোনো একটি বিষয়ে প্রয়োজনে শুরুতে ফ্রি কাজ করে সেই বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ধীরে ধীরে নিজের কাজের পরিধি বাড়িয়ে লক্ষ্যকে বাস্তব করতে হবে।